চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিংহভাগ পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিংহভাগ পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে

টানা দুই মাস বেড়েছে রপ্তানি, তবে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধির চিত্রে দ্বিমত ব্যবসায়ীদের

গত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৫১৯ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।

গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা তিন মাস পণ্য রপ্তানি কমার পর গত জানুয়ারিতে তা আবার ইতিবাচক ধারায় ফেরে। এই ধারা ফেব্রুয়ারিতেও অব্যাহত থাকে। তবে গত তিন মাসে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।  ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ হয়েছে। যদিও গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৫১৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।

গত জানুয়ারিতে ৫৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর আগে ডিসেম্বরের ৫৩১ কোটি ডলারের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার পণ্য রপ্তানির হালনাগাদ এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশলপণ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার–সংকটে রয়েছে। ডলার আয়ের মূল দুটি উৎস প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানি কমলেই অর্থনীতিতে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। দুই মাস ধরে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট পণ্য রপ্তানির সাড়ে ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাকশিল্প থেকে এসেছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিট পোশাকের রপ্তানি ৯ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাকের রপ্তানি কমেছে দশমিক ২৬ শতাংশ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কিছুটা বেড়েছে। তবে পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে, সেটির সঙ্গে আমরা একমত নই। কারণ, সেখানে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠছে না।’

তৈরি পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের ৮৩ কোটি ডলারের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। গত আট মাসে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হয়েছে ৬৪ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত জুলাই–ফেব্রুয়ারি সময়ে ৫৪ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম।

আলোচ্য আট মাসে ৫৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।

পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাজার–সুবিধা বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতাসক্ষম রাখতে সহায়তা করছে। তবে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে সেই সুবিধা আর থাকবে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো তিন বছর শুল্কমুক্ত বাজার–সুবিধা পাবে। এ সুবিধা আমদানি ও রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এলডিসি হিসেবে আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাই, সেসব ভবিষ্যতে থাকবে না। তখন রপ্তানি বাড়াতে হলে নতুন কৌশল বা উদ্যোগ লাগবে। রপ্তানিতে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে পণ্য ও সেবা বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সম্মতি লাগবে।