সবজি কিনছেন ক্রেতারা। দাম কমায় স্বস্তি পাচ্ছেন তাঁরা। আজ শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে
সবজি কিনছেন ক্রেতারা। দাম কমায় স্বস্তি পাচ্ছেন তাঁরা। আজ শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে

গাইবান্ধায় সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কমেছে

‘একন হাতোত তেমন কামকাজ নাই। টুকটাক কাম করি যেকনা ট্যাকা কামাই করি, তার বেশিগুলে ট্যাকা কারেন বিল, চাউল, ডাল ও ঔষুধ কিনতে চলি যায়। প্রতি মাসে ধারদেনা করি সোংসার চলব্যার নাগচি। তা–ও ভালো, একন শাকসবজির দাম কমি গ্যাচে। মাসখানেক আগোত কাঁচা মরিচের সের আচিল ৪০০ ট্যাকা। আচকে এ্যাক সের মরিচের ট্যাকা দিয়া ব্যাগ ভরে সবজি কিননো।’

আজ (শুক্রবার) বিকেলে গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরাতন বাজারে নির্মাণমিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় বাজারদরের কথা বললেন। সেখানে গাইবান্ধা শহরের সরকারপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের মতো ২৫ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা সবাই বাজারে শাকসবজির দাম কমায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারের ক্রেতা–বিক্রেতারা জানান, বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যেমন গত সপ্তাহে যেখানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে তা কমে আজ শুক্রবার ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। একইভাবে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমেছে। প্রতি কেজি আলু আগে ৬০ টাকা বিক্রি হতো, এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। প্রতি কেজি রসুনের দাম গত সপ্তাহের ২৫০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২২০ টাকা।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা কেজির পেঁপে এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি যেখানে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা ছিল, সেখানে বর্তমানে ৩০ টাকা করে বিক্রি হয়। করলার কেজি ৮০ থেকে ৬০ টাকায়, টমেটো ৮০ থেকে ৫৫ টাকায়, শিম ৮০ থেকে ২০ টাকায়, ফুলকপি ৪০ থেকে ১০ টাকায়, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ১২ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুনের দাম ৪৫ থেকে ১৫ টাকায়, গাজর ১০০ থেকে ৪০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ২২ টাকায় এবং শসা ৮০ থেকে ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি আদার দাম ২৭০ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকা হয়েছে।

একই বাজারে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন পর বাজারে আসলাম। এসে দেখি সবজির দাম অনেক কমে গেছে। কম টাকায় ব্যাগ ভরে সবজি কিনলাম। সবজির টাকা সাশ্রয় হওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কিনলাম।’ এরপর একই উপজেলার কুমারপাড়া গ্রামের মজিতন বেগম বললেন, ‘হামরা মানষের বাড়িত ঝিয়ের কাম করি। কয়দিন আগোত সবজি কিনব্যার পাই নাই। একন দাম কম, তাই ম্যালাগুলে শাকসবজি কিননো।’

এই বাজারের সবজি বিক্রেতা এমদাদুল হক বলেন, ‘আগে বেশি দামে সবজি কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। তবে বর্তমানে সবজির দাম অনেকটা কমেছে। ফলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।’

সবজির পাশাপাশি ডিমের দামও কমেছে। এক সপ্তাহ আগে এক হালি ডিম বিক্রি হতো ৫০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পরেশ চন্দ্র বর্মণ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অভিযানও চালানো হচ্ছে।