আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার কমিয়ে ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ ছাড়া সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার ৩ শতাংশের নিচে নামাতে চায়।
নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পটভূমিতে এসব লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় দারিদ্র্য কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের মানুষের জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একজন মানুষের জন্ম থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে জীবনচক্রভিত্তিক এই সামাজিক কর্মসূচিতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বর্তমানে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং সার্বিক দারিদ্র্য ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অতিদারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামলেই একটি দেশকে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করা যায়।
আগামী ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন মাসের মধ্যে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই পরিকল্পনা তৈরি করছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সময়কালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হবে। সেই সঙ্গে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার মূল কাজটিও হবে এই পরিকল্পনার মাধ্যমে।
গত ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এখন চলছে। এটির বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। কোভিডের কারণে এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
পরিকল্পনাসচিব সত্যজিত কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। নবম পরিকল্পনায় তা পুষিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিনিয়োগে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য
দেশে গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগে স্থবিরতা আছে। বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না। পাঁচ বছর ধরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিনিয়োগের অংশ ৩১-৩২ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। আর বেসরকারি বিনিয়োগের অংশ ২৩-২৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ ৪১ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে তা ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য আছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, এমন কথা বলা হবে নতুন পরিকল্পনায়। বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। দেশে বর্তমানে দৈনিক ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ৩০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
বিনিয়োগের জন্য আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের সংস্কারের সুপারিশ থাকছে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এই পরিকল্পনার পটভূমিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়টি ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। সে জন্য ব্যাংক খাতের ওপর তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগের উৎস হিসেবে শেয়ারবাজার শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পটভূমিতে।
গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পটভূমি নিয়ে বৈঠক করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন সচিবেরা। এ ছাড়া ঢালাওভাবে সড়ক, মহাসড়ক, সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের পরিবর্তে প্রয়োজন অনুসারে তা বানানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।