এমসিসিআইর প্রতিবেদন

বোঝাপড়ার অভাব আর প্রণোদনার ওপর নির্ভরতা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিকাশে বড় বাধা

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে বোঝাপড়ার অভাব, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতা এবং প্রণোদনার ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা হচ্ছে এই খাতের অগ্রযাত্রার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। দেশে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অগ্রযাত্রার পথে সাতটি প্রধান বাধার কথা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে। আজ বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

রাজধানীর গুলশানের পুলিশ প্লাজায় মেট্রো চেম্বার মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারুক আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন। বক্তব্য দেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান ও সহসভাপতি সিমিন রহমান।

অনুষ্ঠানে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ইউসুফ হক। এতে তিনি কীভাবে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বাংলাদেশে আনা যায়, তা নিয়ে আলোকপাত করেন।

জরিপে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম রোকনুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে। এতে দক্ষ মানবসম্পদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। তাই এ শিল্পের বিকাশের পথে যেসব বাধা বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে খুব ভালো করছে। এটিও বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ যাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে না পড়ে, সে জন্য এ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল গড়ে তোলার সুপারিশ উঠে আসে জরিপে। এতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা চালুর পাশাপাশি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তড়িৎ প্রকৌশল, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তরদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিপ ডিজাইনার তৈরি সম্ভব হবে বলে জরিপে মত দেন উত্তরদাতারা।

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো ও ফেলোশিপ চালুর পরামর্শ দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।

এ ছাড়া জরিপ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পোশাক, জুতা ও কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মাইক্রোচিপ উৎপাদনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা গেলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটি হলে এ শিল্প মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপিতে) সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, জুতা ও কৃষিপণ্যের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ। এসব খাত সেমিকন্ডাক্টরনির্ভর উদ্ভাবনের জন্য খুবই উপযুক্ত। ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল, মোটরগাড়ি ও এর যন্ত্রাংশ এবং পরিশোধিত তেলের পর বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর এখন চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক পণ্য। প্রতিনিয়ত এ পণ্যের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে এটি এক লাখ কোটি ডলারের শিল্পে পরিণত হবে। ফলে বাংলাদেশের সামনে এ শিল্পের বিকাশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে তিনটি প্রতিষ্ঠান চিপ ডিজাইনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে ৪০০ চিপ ডিজাইনারের কর্মসংস্থান হয়েছে।