তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখন ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এই শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে লেখা এক চিঠিতে এ সুপারিশ করা হয়।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে এনবিআর। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে। এখন পণ্যটির আমদানি শুল্কও প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হলো।
আজ রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। অনেক পাড়ামহল্লায় আরও ১০ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ট্যারিফ কমিশন বলেছে, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের মজুত এখন শেষের দিকে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছর আগের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৩৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। গত এক মাসে এ দাম প্রায় ৮ শতাংশ ও এক বছরে তা ১৭ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও গত এক বছরে পেঁয়াজের দাম ১১৬ শতাংশ বেড়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে এ চাহিদার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়; বাকিটা পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম উৎস হচ্ছে ভারত। উৎপাদন কম হওয়ায় প্রতিবেশী এই দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করেছিল। সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও এখনো ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল রেখেছে। ফলে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানির কারণে দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
এ অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি নিরসন ও পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানো ও আমদানি ব্যয় কমানো প্রয়োজন বলে জানায় ট্যারিফ কমিশন। সে জন্য পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ শুল্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রত্যাহারের সুপারিশ করে সংস্থাটি।