সাইবার হামলা চালিয়ে বিপুলসংখ্যক বিটকয়েন চুরি করেছে হ্যাকাররা
সাইবার হামলা চালিয়ে বিপুলসংখ্যক বিটকয়েন চুরি করেছে হ্যাকাররা

বিটকয়েনের দাম উঠেছে ৯০ হাজার ডলারে, পাচ্ছে রাজনৈতিক আনুকূল্যও

একটি বিটকয়েনের দাম প্রায় ৯০ হাজার ডলারে উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই বিটকয়েনের এই রমরমা অবস্থা। আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টো–বান্ধব হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম চলতি সপ্তাহে চড়চড় করে বাড়ছে। গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিটকয়েনের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এশিয়ায় আজ মঙ্গলবার একটি বিটকয়েন বিক্রি হয়েছে ৮৯ হাজার ৬৩৭ ডলারে।

মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে বিটকয়েন পাল্লা দিচ্ছে ইলন মাস্কের টেসলার সঙ্গে। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন, ট্রাম্পের বন্ধুরা এবং যেসব বিষয়ে তাঁর আগ্রহ আছে, সেসব বিষয় তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভালো করবে।

সিডনির এটিএফএক্স গ্লোবালের প্রধান বাজার বিশ্লেষক নিক টুইডেল বলেন, ‘পরিষ্কারভাবেই এটা ট্রাম্পের জন্য হচ্ছে। কারণ, তিনি এই শিল্পের খুবই সমর্থনকারী। এর মানে হলো, ক্রিপ্টোর মজুত ও মুদ্রা উভয়েইর চাহিদা আরও বাড়বে। নির্বাচনের ফল আসার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় রেকর্ড পর্যায়ে ওঠার মানে হলো, এই মুদ্রার ওপরে কেবল খোলা আকাশ রয়েছে।’

প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প ডিজিটাল সম্পদ গ্রহণ করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি ‘এই গ্রহের ক্রিপ্টো রাজধানী’ বানাবেন এবং বিটকয়েনের একটি জাতীয় মজুত গড়ে তুলবেন।

এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কবে ও কীভাবে বিষয়টি ঘটবে। তবে এই সম্ভাবনা ক্রিপ্টোর মাইনিং কর্মকাণ্ড জোরালো করেছে এবং এ–সংক্রান্ত শেয়ারের লেনদেনও বেড়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি অ্যাস্ট্রোনট ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাথু ডিব বলেন, ‘এর ফলে অন্যান্য দেশও বিটকয়েন কিনে যুক্তরাষ্ট্রের আগে থাকার চেষ্টা করবে—এমন সম্ভাবনা বেড়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত বিটকয়েন মাইনারদের জন্য এটি একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।’

ওয়াল স্ট্রিটে লেনদেন শুরুর আগেই ক্রিপ্টো মাইনার রায়ট প্ল্যাটফর্মসের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ বেড়েছে। লেনদেনের সময় শেষে এর দাম আরও বাড়ে। আরও দুই ক্রিপ্টো মাইনিং কোম্পানি মারা হোল্ডিংস ও ক্লিনস্পার্কের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

সফটওয়্যার কোম্পানি ও বিটকয়েনে বিনিয়োগকারী মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর ও ১০ নভেম্বরের মধ্যে বিটকয়েন কিনতে তারা ২০০ কোটি ডলার খরচ করেছে। এতে তাদের লাভ বেড়ে চলেছে।

তবে কেবল বিটকয়েনই নয়, ছোটখাটো ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ঘিরেও উচ্ছ্বাস চলছে, যেমন ইথার। এমনকি একসময় যে ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ে মজা করা হতো, সেই ডজকয়েনের দামও বেড়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান গ্যারি গেনসলার আর খুব বেশি দিন তাঁর দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। কারণ, ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি তাঁকে পরিবর্তন করবেন। গ্যারি গেনসলারের অধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্রিপ্টোর ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি চালাত। গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প নিজেও একটি ক্রিপ্টো ব্যবসা চালু করেছেন, যার নাম ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিন্যান্সিয়াল।

ডিজিটাল সম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান কিরকের এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক প্রধান জাস্টিন ডি’অ্যানেথান বলেন, ‘আমরা যা দেখছি, তা কেবল দামের একটি মাইলফলক নয়; বিটকয়েন যে একটি স্থিতিশীল, এমনকি রাজনৈতিকভাবে প্রশয়প্রাপ্ত সম্পদ—এ ইঙ্গিত ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে।’