বাজারে এক সপ্তাহে একটি পণ্যের দাম কমেছে, বেড়েছে চারটির। দাম কমার তালিকায় আছে শুধু ডিম। নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের।
চারটি পণ্যের দাম আরও বাড়ল এমন এক সময়ে, যখন বাজারে কোনো স্বস্তি নেই। এই চার পণ্য কেনা ছাড়া সংসারও চলে না। পণ্যগুলোর দাম কমাতে সরকার শুল্ক–করে ছাড় দিয়েছে; কিন্তু এর সুফল এখনো বাজারে পড়েনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কছাড়ের পণ্য এখনো বাজারে আসেনি। বিশ্ববাজারেও দাম বাড়ছে। অন্যদিকে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শুল্ক কমানোর সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে, তাহলে প্রভাব পড়বে। দাম যাতে কমে, সে বিষয়ে নজরদারিও দরকার।
নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে চাপে পড়ে চালের দাম বাড়লে। দেশে দু-তিন বছর ধরেই চালের দাম বেশ চড়া। এ সপ্তাহে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ১–৩ টাকা বেড়েছে। বেশি বেড়েছে মাঝারি চালের দাম, যার ক্রেতা স্বল্প আয়ের মানুষ।
চালের দাম বাড়ছে
নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে চাপে পড়ে চালের দাম বাড়লে। দেশে দু-তিন বছর ধরেই চালের দাম বেশ চড়া। এ সপ্তাহে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ১–৩ টাকা বেড়েছে। বেশি বেড়েছে মাঝারি চালের দাম, যার ক্রেতা স্বল্প আয়ের মানুষ।
ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল সোমবার মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬১-৬২ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৮-৫৯ টাকা। ব্রি-২৯ চাল কেনা যাচ্ছে ৬২-৬৪ টাকা কেজি। এ চালের দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়েছে। সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের দাম কেজিতে ১–২ টাকা বেড়েছে। রশিদ, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট প্রতি কেজি ৭০–৭২ টাকা এবং ভালো মানের নাজিরশাইল ৮০ টাকা বা তার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের কেজি ৫২–৫৫ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়েনি।
কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকান থেকে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা চাল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। দুই বাজারের খুচরা দোকানেও দাম কিছুটা কম থাকে। সে তুলনায় রাজধানীর অন্য বাজার ও পাড়ার খুচরা দোকানে দাম আরও বেশি।
মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ভোজ্যতেল ও চিনিতে শুল্ক–কর ছাড় দিয়েছে। যদিও এর প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩–৪ টাকা। বাজার ও দোকানভেদে এখন এক কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি মার্কেটের বেঙ্গল রাইস এজেন্সির মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ধানের সরবরাহ কম, এ কারণ দেখিয়ে মিলের মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।
এখন আমন মৌসুম চলছে। এই মৌসুমে অসময়ের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর আসছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমনে উৎপাদন কম হলে চালের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
এদিকে দুই দিন আগে সরকার চাল আমদানির শুল্ক–কর কমিয়ে দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বলা হয়েছিল, শুল্ক–কর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। যদিও চাল আমদানি এখনো শুরু হয়নি।
চালের বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝে চাল আমদানি বাড়াতে হবে। যাতে বাজারে সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি না হয়। ঘাটতির আশঙ্কা থেকে মিলমালিকেরাও সুযোগ নিতে না পারেন।
তেল, চিনি ও পেঁয়াজ
মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার ভোজ্যতেল ও চিনিতে শুল্ক–কর ছাড় দিয়েছে। যদিও এর প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। পণ্য দুটির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩–৪ টাকা। বাজার ও দোকানভেদে এখন এক কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকার ৮ ও ১৭ অক্টোবর দুই দফায় চিনির শুল্ক–কর কমায়। সর্বশেষ দফায় এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চিনি আমদানিতে খরচ কমবে কমবেশি ১১ টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্কছাড়ের চিনি বাজারে এখনো আসেনি।
১৭ অক্টোবরই ভোজ্যতেলের শুল্ক কমানো হয়। ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার পর সরকার শুল্ক কমায়, যাতে দাম বাড়াতে না হয়। কিন্তু সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম লিটারে ১–২ টাকা বেড়েছে এক সপ্তাহে। বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৩-১৫৬ টাকা ও পাম তেল ১৪৮-১৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম বাড়েনি।
গত দুই দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম, ১১০-১১৫ টাকা।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে গতকাল শুল্কছাড়ে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম খালাস শুরু হয়। আমদানিকারকের প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, যে খরচ পড়েছে, তাতে পাইকারিতে প্রতিটি ডিম ৯ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।
দেশে পেঁয়াজের বড় পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী হাটের আড়তদার রাজা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ভারত থেকে আসার পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন কৃষকেরা। তিনি আরও জানান, কৃষকের কাছে পেঁয়াজের মজুত শেষের দিকে। বছরের এ সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসার কথা। কিন্তু বন্যা-বৃষ্টির কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাতে দেরি করেন কৃষকেরা। এটিও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ।
শুল্কছাড়ের পর ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। সরকার বাজারে নজরদারিও করছে। এতে ডিমের দাম কমেছে। গতকাল খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম প্রতি ডজন ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা কয়েক দিন আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে গতকাল শুল্কছাড়ে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম খালাস শুরু হয়। আমদানিকারকের প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, যে খরচ পড়েছে, তাতে পাইকারিতে প্রতিটি ডিম ৯ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।
‘এতটা বাড়বে কেন’
দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভের একটি কারণ ছিল নিত্যপণ্যের দাম। নতুন সরকার দাম কমানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে অসময়ে বৃষ্টি ও বন্যাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এদিকে বাজারে এখনো মুরগি, বিভিন্ন ধরনের মাছ ও সবজির দাম চড়া। আলুও প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরকার আলু আমদানিতে শুল্কছাড় দিলেও দাম তেমন একটা কমেনি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সালমা আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যার কারণে সবজি, পেঁয়াজ, মুরগিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে, এটা বুঝি। কিন্তু এতটা বাড়বে কেন? দাম কমাতে সরকারের নানা উদ্যোগ দেখছি, বাজারে গিয়ে তার সুফল তেমন একটা পাচ্ছি না।’