কেবল একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন, এমন দরপত্রের মাধ্যমে গত ১১ বছরে ৬০ হাজার ৬৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ই-জিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব দরপত্রের প্রতিটিতে একজন ঠিকাদার অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই ঠিকাদারই কাজ পেয়েছিলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, এ ধরনের চর্চায় দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে।
টিআইবির ‘বাংলাদেশে ই-সরকারি ক্রয়: প্রতিযোগিতামূলক চর্চার প্রবণতার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে প্রতি পাঁচটি দরপত্রের একটি একক দরপত্রের ভিত্তিতে হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে আজ সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক প্রভাব ও ঠিকাদারের যোগসাজশে দরপত্রপ্রক্রিয়া একচেটিয়া হচ্ছে। এতে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত হয়। আগেই ঠিক হয়ে যায়, কাকে কাজ দেওয়া হবে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একজন ঠিকাদারের দরপত্র পড়লে দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে। প্রতিযোগিতার চর্চা হয় না। প্রতিযোগিতার বাজার দখল হয়ে যায়। সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি পদ্ধতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশন এ নিয়ে কাজ করতে পারে।’
এই গবেষণা করতে নেতৃত্ব দেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। অন্য দুজন গবেষক টিআইবির রিফাত রহমান ও কে এম রফিকুল আলম।
গবেষণা প্রতিবেদনে কাজের ভিত্তিতে একক দরপত্রপ্রবণ শীর্ষ ১০টি ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী সদর উপজেলার প্রকৌশল অফিস; হবিগঞ্জের বিপিডিবির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৫; সোনাইমুড়ী পৌরসভা; চট্টগ্রামের বিপিডিবির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৫; মাধবদী পৌরসভা; গৌরনদী পৌরসভা; ফেনীর পৌরসভা বিভাগ; সিলেটের বিপিডিবির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৫; সিলেটের বিপিডিবির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-৩।
একইভাবে টাকার অঙ্কে একক দরপত্রে কাজ পাওয়া শীর্ষ ঠিকাদার হলো ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, নাভানা লিমিটেড, মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজ, ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, র্যাংগস লিমিটেড, মেসার্স এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ফন ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স বকলি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ভূঁইয়া বিল্ডার্স ও মেসার্স তেলিখালী কনস্ট্রাকশন। গবেষণায় এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক কারা, তা বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফেনী ও নোয়াখালী জেলা সবচেয়ে বেশি একক দরপত্রপ্রবণ এলাকা। সেখানে প্রতি দুটি কার্যাদেশের মধ্যে একটি একক দরপত্রে দেওয়া হয়েছে। এরপরে আছে কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ। এই তালিকায় ঢাকার অবস্থান পঞ্চম।
টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সমন্বয়ক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো একটি দরপত্রে একজন ঠিকাদার অংশ নিলে এবং তাকে কাজ দিলে দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ে।
এই গবেষণাকাজের জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৬৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫ হাজার ৮৩০টি ক্রয় কর্তৃপক্ষের ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৩৩টি কার্যাদেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব কার্যাদেশের ক্রয় চুক্তিমূল্য ছিল ৪ লাখ ৪১০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এসব দরপত্রে ৪১ হাজার ৯১৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল।