বাংলাদেশসহ ১২টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। এ উত্তরণের ফলে এসব দেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা হারাবে। এতে দেশগুলো রপ্তানিতে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়বে, তার ৯০ শতাংশই হবে বাংলাদেশের। মূলত এলডিসি থেকে বের হলে প্রচলিত শুল্ক-কর দিয়েই ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তাতে রপ্তানি কমতে পারে।
গতকাল রোববার ‘ডব্লিউটিও-এমসি ১২ থেকে প্রাপ্তি: স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণে পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক এক সংলাপের মূল প্রবন্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে সহায়তা করে ফ্রেডরিক এভার্ট স্টিফটাং (এফইএস)। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশসহ এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো নেপাল, ভুটান, অ্যাঙ্গোলা, লাওস, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সাও তামে অ্যান্ড প্রিন্সেপে। এসব দেশ মোট যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তার ৫৩ শতাংশই বাংলাদেশের। সেবা রপ্তানির ক্ষেত্রে এ হার ৭১ শতাংশ। বিশ্বসম্প্রদায় বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ, এলডিসিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরণ অন্যতম বড় ঘটনা। তাই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ, তা ধরেই সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে।
‘প্রতারিত প্রেমিকের মতো’
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন একটুখানি প্রতারিত প্রেমিকের মতো হয়েছে। আমরা ডব্লিউটিওর কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছি, কিন্তু ডব্লিউটিও আমাদের তা দিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, দর-কষাকষি বা আলোচনা করে বাজারসুবিধা পাওয়া যাবে। আমি একটু দুর্বল বলে আমাকে সব সুবিধা দেবেন, আমি কিছু দেব না—এটা বেশ পুরোনো ধাঁচের বাণিজ্য আলোচনা। এর জন্য ডব্লিউটিও সৃষ্টি হয়নি।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ডব্লিউটিওর দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে স্বীকৃতি আছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি বলেন, পশ্চাৎপদ চিন্তা বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা করতে হবে। রাজনীতিবিদ ও পেশাদারদের ভাষ্যের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ডব্লিউটিওর সভায় মন্ত্রী বলছেন, আমরা অনেক অর্থনৈতিক উন্নতি করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হয়ে যাব। আবার যাঁরা কারিগরি বিষয়ে দর–কষাকষি করেন, তাঁরা একই সভায় বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাজারসুবিধা দিতে হবে। তখন বিদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কোনটি ঠিক?’
আলোচনা
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে রপ্তানি খাতের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশ গভীর সংকটে পড়বে বলা হলেও আমি তা মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটামুক্ত শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা উঠে যাওয়ার সময়েও একই কথা বলা হয়েছিল।’