দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

কমিটির প্রথম সভা

দুর্নীতির কারণ, মাত্রা ও ব্যাপ্তি এসব থাকবে শ্বেতপত্রে

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘অনেকের মধ্যেই ধারণা রয়েছে যে আমরা দুর্নীতি ধরার কমিটি। বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই, এটি দুর্নীতি ধরার কমিটি নয়। তবে অর্থনীতিতে দুর্নীতির মাত্রা, ব্যাপ্তি ও কেন দুর্নীতি হয়, তা বলা হবে। এসব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। দুর্নীতি ধরার জন্য সরকারের অন্য সংস্থা আছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, দুর্নীতি নিয়ে হয়তো কারও নাম আসবে না। কিন্তু দুর্নীতির ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা সতর্কভাবে বলা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কমিটির প্রধানের কার্যালয়ে এই সভা হয়। সভা শেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সভায় অর্থ পাচার নিয়ে কিছুটা আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত হবে। পাচার করা টাকা ফেরত আনা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। নানাভাবে হাতবদল হয়ে টাকা বিদেশে গেছে। এই অর্থ ফেরত আনতে হলে দেশের আইনে মামলা করে ডিক্রি জারি করতে হবে। আবার বিদেশে যেখানে গেছে, সেখানেও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বিদেশে পাচার করা অর্থে যেসব সম্পদ কেনা হয়েছে, তা বিক্রি করে অর্থ ফেরত আনতে হবে। পুরো বিষয়টি এত সহজ নয়। এ জন্য চুক্তি ও আইন লাগবে। তিনি বলেন, আর যেন টাকা পাচার না হয়, টাকা পাচার করলে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা বলা থাকবে শ্বেতপত্রে।

দুর্নীতি নিয়ে হয়তো কারও নাম আসবে না। কিন্তু দুর্নীতির ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা সতর্কভাবে বলা হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, প্রধান, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ও সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি।

ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে কমিটি কোনো কাজ করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করব না। সরকার ব্যাংক কমিশন করার চিন্তা করছে। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ পেতে ব্যাংক খাতের সমস্যা কী, তা তুলে ধরা হবে। যেমন তারল্যসংকট, নামে-বেনামের ঋণ, সঞ্চিতি ঘাটতি এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।’

সরকারি অর্থের ব্যয় নিয়ে শ্বেতপত্রে আলোচনা করা হবে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা সব প্রকল্প বিশ্লেষণ করব না। সেই সময়ও নেই। তবে মেগা প্রকল্প নিয়ে কাজ করব। অর্থনীতিতে এসব প্রকল্প কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, অনেক প্রকল্প বিদেশি ঋণ করা হয়েছে, তা শোধ করার ব্যাপার আছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনার জন্য অনুশীলন। বর্তমান সরকার উপলব্ধি করেছে, কী ধরনের উত্তরাধিকারের অর্থনীতিতে তারা কাজ করবে। সেই ভিত্তিভূমি রচনা করাই আমাদের অন্যতম কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণ করব না। আমরা এই মুহূর্তের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরব।’

শ্বেতপত্রে যা থাকতে পারে* টাকা পাচার করলে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা বলা থাকবে।* বেসরকারি বিনিয়োগ পেতে সমস্যা কী, তা তুলে ধরা হবে।* সরকারি অর্থের ব্যয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে* বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনা করা হবে।* ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেবে কমিটি।  

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছে।

এর আগে ২১ আগস্ট দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির বাকি ১১ সদস্য হলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরুর) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

শ্বেতপত্রে ছয়টি ক্ষেত্রে আলোকপাত করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সম্পদ, সরকারি ব্যয় (সরকারি বিনিয়োগ, এডিপি, ভর্তুকি ও ঋণ) ঘাটতি বাজেট অর্থায়ন বিষয়াদি থাকবে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকবে উৎপাদন, সরকারি কেনাকাটা ও খাদ্য বিতরণ এবং বাহ্যিক ভারসাম্যের মধ্যে থাকবে রপ্তানি, আমদানি, প্রবাসী আয়, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বিদেশি অর্থায়নের প্রভাব ও ঋণ।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে।