বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতের বাজারেও সোনার দাম বাড়ছে। গতকাল সোমবার রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর আজ মঙ্গলবার কিছুটা কমেছে সোনার দাম। আজ দেশটির বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৫১১ রুপি।
দ্য মিন্ট জানায়, গত শুক্রবার ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনার দাম ৭৫ হাজার রুপি পেরিয়ে যায়। এরপর গতকালও দাম বাড়ে ৬০০ রুপি। ফলে গতকাল ভারতের বাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড স্থাপন করে। প্রতি ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ হাজার ৭০০ রুপি। গতকাল সোনার দাম সেখান থেকে কিছুটা কমেছে। এদিকে ফেডারেল রিজার্ভ গতকাল বলেছে, আপাতত নীতি সুদহার কমছে না, এই বাস্তবতায় সোনার দাম কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের বাজারে আজ রুপার দাম কিছুটা কমেছে। আজ দেশটিতে রুপার গড় দাম ছিল ৮৬ হাজার ৪০০ রুপির ঘরে। গতকাল রুপার দাম কেজিতে ২ হাজার ৪৫০ রুপি বেড়ে ৯৩ হাজার ২০০ রুপিতে উঠে গিয়েছিল। জিএসটি বা পণ্য ও পরিষেবা কর যোগ করলে দাম আরও বেড়ে যাবে।
এই অবস্থায় সোনা বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ক্রেতা-বিক্রেতারা। যত দিন যাচ্ছে, সোনা ততই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গয়নার দাম এভাবে বাড়তে থাকায় সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন ক্রেতারা। মাঝে কিছুদিনের জন্য দাম কমেছে। অনেকে তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির জন্য আগাম গয়না কিনেছিলেন। ওই সময় যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে বাজারে পা রাখতে পারেননি, তাঁরা পড়েছেন সমস্যায়। আশঙ্কা বাড়ছে গয়নার ব্যবসায়ীদেরও।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও নীতি সুদহার—উভয়ই অনেক দিন ধরে বেশি।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যানুসারে, গতকাল বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৪৪৫ ডলার পর্যন্ত ওঠে। ডলারের বিনিময় হার বাড়লে সাধারণত সোনার দাম কমে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সোনার দাম পড়তে শুরু করে, যার অন্যতম কারণ ছিল ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের বন্ডের সুদহার ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ওপরে উঠে যাওয়া।
সোনার ব্যবহার কেবল অলংকার তৈরির মধ্যে সীমিত নয়, বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের সুদহার বাড়লে বা শেয়ারবাজার শক্তিশালী হলে বিনিয়োগকারীরা এগুলোর মধ্যে বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজে পান, তখন সোনার চাহিদা কমে। সে কারণে ২০২২–২৩ সালে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন। ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করলে বন্ডের সুদহারও কমে যাবে। সে জন্য বিনিয়োগকারীরা আগেভাগে সোনায় বিনিয়োগ করতে শুরু করায় চলতি বছর সোনার দাম এমন লাগামছাড়া হয়েছে। ফেড এখন বলে দিয়েছে, আপাতত নীতি সুদহার কমছে না। ফলে ডলার আরও শক্তিশালী হলে সোনার চাহিদা কমতে পারে বলে ধারণা করা যায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাংক সোনার মজুত বাড়াচ্ছে, যা বিশ্ববাজারে সোনার মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ। ভূরাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আর্থিক খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা এই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকও আছে।