বাণিজ্য মেলায় বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি নজর কাড়ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও। গৃহস্থালি ও নিত্যব্যবহার্য হাজারো পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা। উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই তাঁদের স্টলে ক্রেতারা ভিড় করছেন।
ছোট উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বাণিজ্য মেলায় আলাদা স্টল নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠান ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জায়গা করে দেন। চলতি বছর বাণিজ্য মেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) পৃথক চারটি স্টল নিয়েছে। এসব স্টলে ৭৭ জন উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের তৈরি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও প্রায় অর্ধশত উদ্যোক্তার তৈরি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে স্টলগুলোতে।
পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে জায়গা পেয়েছেন ১১ জন এসএমই উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে রয়েছে চামড়ার জুতা, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, আসবাব, শুকনা খাদ্যসামগ্রী ও রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান।
এসব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় পণ্য বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। বিক্রির পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার অনেকেই বড় ধরনের ক্রয়াদেশও পেয়েছেন।
বিদোরা ব্যাগ অ্যান্ড হ্যান্ডিক্র্যাফটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে রিসাইক্লিং (পুনঃ ব্যবহারযোগ্য) ডেনিম কাপড়ের তৈরি ব্যাগ প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সোহেলী সাজিয়া জানান, মেলায় এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ক্রয়াদেশ পেয়েছেন। আরও কয়েকজন ক্রেতা পণ্য নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সারা বছরই পণ্য বিক্রি করেন। তবে মেলার মাধ্যমে বড় ক্রেতাদের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র তৈরি হয়। দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হচ্ছে।
এ বছর মেলায় বিসিকের স্টলে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৪ জন উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে স্টলে পণ্য বিক্রি করছেন বিসিকের কর্মকর্তারা। বিসিকের স্টলে শতরঞ্জি, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, জামদানি, নকশিকাঁথা, নারীদের পোশাক ও মধুসহ শতাধিক পণ্য রয়েছে।
বিসিকের বিপণন বিভাগের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ফেরদৌসী সুলতানা জানান, দিন যত যাচ্ছে, বেচাকেনা তত বাড়ছে। মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়। আর শুক্র-শনিবারে বিক্রি এক লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়।
মেলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্যাভেলিয়নের দুই পাশে সারি করে ৩২ জন উদ্যোক্তা পণ্য বিক্রি করছেন। তাঁদের মধ্যে ২১ জন জয়িতা বিপণন কেন্দ্রের ও ১১ জন ই-জয়িতার উদ্যোক্তা। এ ছাড়া স্টলের একপাশে থাকা জয়িতা ক্র্যাফট কর্নারে আরও কিছু প্রান্তিক উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন জয়িতার কর্মীরা। পণ্যগুলোর মধ্যে নারী ও বাচ্চাদের পোশাকই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, শতরঞ্জি, কুশিকাটার পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য, মৃৎপণ্য, বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মিনিয়েচার ও শুকনা খাবার প্রভৃতি।
জয়িতার স্টলে শতরঞ্জি ও পাটজাত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন উদ্যোক্তা ফজিলাতুন নেছা। তাঁর কাছে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৭০০ টাকা দামের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। ফজিলাতুন নেছা বলেন, বেশির ভাগ ক্রেতা তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামের পণ্য কিনছেন।
জয়িতা ফাউন্ডেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক সবুজ দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে ৫০ শতাংশ বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি জয়িতার স্টলে এ বছর উদ্যোক্তার সংখ্যাও বেড়েছে।
বাণিজ্য মেলায় জেডিপিসি স্টলটি যে কারও নজর কাড়বে। বাঁশ, পাটখড়ি ও ছন দিয়ে সাজানো এ স্টলটিতে ২০ জন উদ্যোক্তা ২৮২ ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য বিক্রি করছেন। মূলত পাটপণ্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক অন্য অনেক উপকরণ যুক্ত করে এসব পণ্য বানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে জেডিপিসির স্টল থেকে শোপিস কিনেছেন রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা ফারহানা বানু। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্টলে ব্যতিক্রমী অনেক পণ্য রয়েছে। সাধারণত মেলায় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে এখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে। আর স্টলের জায়গা অনেক সীমাবদ্ধ হওয়ায় দেখেশুনে পণ্য কেনার সুযোগও পাইনি।’