বিশ্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মান ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে মার্কিন ডলারভিত্তিক বন্ডের উচ্চ সুদহার, যা এখন ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ইয়েন ধীরে ধীরে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার কারণেও ডলারের এই চাঙাভাব। চীনা মুদ্রা ইউয়ানের অবস্থাও ভালো নয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, যেসব কারণে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ ভিত্তি পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে, সেগুলো হলো অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর খবর, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও বাগাড়ম্বর এবং ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলার ঘোষণা। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার এখন ২০০৭ সালের পর সর্বোচ্চ।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, চলতি বছর ফেডারেল রিজার্ভ আবার সুদহার বৃদ্ধি করবে, এমন সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। এদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ মাসের মধ্যে আরেকবার নীতি সুদহার বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় অর্থনীতির পালে তেমন একটা হাওয়া নেই বলে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ফেডের মতো অতটা যুদ্ধংদেহী অবস্থায় নেই, বরং নীতি সুদের বিষয়ে তারা অনেকটা সতর্ক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নীতি সুদহারের ব্যবধানের কারণে আরও কিছুদিন মার্কিন ডলারের পালে হাওয়া থাকবে। তবে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়াতে শুরু করলে ইউরোর বিপরীতে ডলার দুর্বল হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়ার কারণে রাতারাতি ইউরোর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ দরপতন হয়েছে। চলতি ত্রৈমাসিকে ইউরোর দর ৩ শতাংশ কমেছে, বছরের আর কোনো প্রান্তিকে তা এতটা কমেনি।
পাউন্ডেরও দরপতন হচ্ছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ব্রিটিশ মুদ্রার দর ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এক পাউন্ডের মান ১ দশমিক ২১ ডলারে নেমে এসেছিল, ছয় মাসের মধ্যে যা ছিল সর্বনিম্ন। আজ সকালে এশিয়ার বাজারে পাউন্ডের মান এর চেয়ে সামান্য বেশি ছিল।
এসব কারণে মার্কিন ডলার সূচক বা ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান এখন গত নভেম্বর মাসের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে—১০৬ দশমিক ১।
রয়টার্স বলছে, গত সপ্তাহের বেশ কিছু ঘটনায় মনে হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যতীত অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধির ধারা শেষ করতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক সুদহার অপরিবর্তিত রাখার কারণে সুইস ফ্রাঁর মান গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো অতি নিম্ন সুদহারের নীতিতে থাকার কারণে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দর কমছেই। এক ডলারের বিপরীতে এখন প্রায় ১৫০ ইয়েন পাওয়া যাচ্ছে।
ডলারের মান ১৫০ ইয়েনে উঠে যাওয়া দেশটির কর্মকর্তা ও বাজারের জন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপের কারণ। সে কারণে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাজারে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাপানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক, সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে আজ মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস ও বাড়ি বিক্রয়ের তথ্য প্রকাশিত হবে। এসব সূচকের সামান্য অবনতি হলে যে ডলারের দরে খুব একটা প্রভাব পড়বে, তা নয়।
এই পরিস্থিতিতে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাবে এখন খবর একদম পাকা না হওয়া পর্যন্ত ডলারের দর হ্রাসের সম্ভাবনা কম।