১৫ দিন আগেও আলুর কেজি ৪০ টাকার নিচে ছিল, যা এখন ৫০ টাকা। আর এক বছরের হিসাবে, আলুর দাম বেড়েছে ৭৮%।
বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা ছুঁয়েছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৪০ টাকার নিচে। ঠিক এক বছর আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ২৮ টাকা দরে; অর্থাৎ এক বছরে আলুর দাম ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে এ বছর আলুর উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এমনকি চাহিদার তুলনায়ও অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সে জন্য আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ কম হয়েছে। তাই আলুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে আলুর দাম বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, এটির চাহিদা, উৎপাদন ও সংরক্ষণ (মজুত) নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের তথ্যে বড় ধরনের গরমিল রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২১-২২ মৌসুমে দেশে মোট ১ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়। আর গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে আলু উৎপাদিত হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন; অর্থাৎ এক বছরে উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশে আলুর চাহিদা ছিল ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। সেই হিসাবে দেশে চাহিদার বিপরীতে ১৬ লাখ টনের মতো উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। তাঁরা হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলু খালাস করছেন না। এ ছাড়া পরিবহনের সমস্যা, ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হতে না পারাও দাম বাড়ার কারণ বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
চলতি বছর দেশে ৪৩ জেলায় ৩৬৫টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টনের বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২ সালে এসব হিমাগারে মোট ২৭ লাখ ৮ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে চলতি ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ২৪ লাখ ৯২ হাজার টনে। এর মধ্যে খাওয়ার আলু ১৮ লাখ ২১ হাজার টন; বাকিটা বীজ আলু।
যেসব জেলায় আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ বেশি হয়, তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জ অন্যতম। এই জেলার রিভারভিউ হিমাগারের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮০ হাজার বস্তা। এ বছর আলু এসেছে মাত্র ৭৫ হাজার বস্তা।
হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি তথ্যে উৎপাদন বেশি দেখালেও আসলে আলু উৎপাদন কমেছে। এ কারণে চলতি বছর হিমাগারগুলোতে গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণে আলু সংরক্ষণ করতে পেরেছেন তাঁরা।
মুন্সিগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আলু উৎপাদনের সরকারি তথ্য ও বাস্তবতার মধ্যে মিল নেই। এ বছর হিমাগারে প্রয়োজনের তুলনায় আলু মজুত হয়েছে কম। তাতে অবশ্য এখনই বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয়।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যাপারী আবদুর রহিম বলেন, হিমাগার থেকে বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়তি।
দেশে নভেম্বর মাসে আলুর আবাদ করা হয়। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফসল তোলা হয়। উৎপাদিত আলুর একটি অংশ হিমাগারে সংরক্ষণ না করেই জানুয়ারি-মে পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হয়। অবশিষ্ট অংশ কৃষকদের কাছ থেকে কিনে হিমাগারে রাখেন ব্যাপারী ও পাইকারি বিক্রেতারা। সাধারণত জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে হিমাগারের আলু সরবরাহ হয়।
বিএআরসির হিসাবে, পাঁচ মাসে হিমাগারের বাইরে থাকা আলু বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৪০ লাখ টন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে হিমাগারে মোট ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ ২০ হাজার টন আলুর হিসাব মেলে। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন।
এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তথ্যে বড় তারতম্য রয়েছে। এ জন্য আলুর চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে মিল নেই।