গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় চারটি অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ করে নিয়েছে রাশিয়া। তবে এসব অঞ্চল কেবল রাশিয়ার ভূখণ্ডের আকারই বাড়াবে না, একই সঙ্গে অর্থনীতির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। কারণ, সাবেক ইউক্রেনীয় এই অঞ্চলগুলো শিল্প ও কৃষির দিক থেকে সম্ভাবনাময়। খবর আরটির
সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইউক্রেনের সেই চার অঞ্চল হলো খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস। গত সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত গণভোটে রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে এসব অঞ্চলের লোকেরা ভোট দেন। এরপর এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট রাশিয়ার এ দাবি অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেছে। তবে পশ্চিমাদের অবস্থান যা-ই হোক, আপাতত এসব অঞ্চলের মালিকানা রাশিয়ার কাছেই থাকছে বলে মনে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ইউক্রেনের সাবেক এসব অঞ্চল থেকে শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে রাশিয়া অনেক ধরনের সুবিধা পেতে পারে।
রাশিয়ার সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া চারটি অঞ্চলের মোট আয়তন প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। এই আয়তন ইউক্রেনের মোট আয়তনের ১৫ শতাংশের বেশি। এই অঞ্চলগুলোতে ৪০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। আর আবাদযোগ্য ভূমি আছে ৫৬ লাখ হেক্টরের বেশি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এলাকা ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এই অঞ্চলে ইউক্রেনের রুশভাষী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বসবাস করে। ইউক্রেনের কয়লাভিত্তিক অর্থনীতির কেন্দ্র ছিল এই দনবাস এলাকা।
খনিজসমৃদ্ধ এই অঞ্চলে আছে ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম কয়লাক্ষেত্র। এখানে উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুত আছে এক হাজার কোটি টনের বেশি। এ ছাড়া দনবাসে থাকা ১১৫টি কয়লাখনি থেকে বছরে প্রায় ৭ কোটি টন কয়লা উৎপাদিত হয়। দোনেৎস্ক অঞ্চলে আছে আটটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র।
অন্যদিকে লুহানস্ক হচ্ছে ওই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহনকেন্দ্র। পাশাপাশি এলাকাটি ধাতুবিদ্যা, যন্ত্রপাতি ও কৃষিশিল্পের জন্যও সুপরিচিত। এখানে রাসায়নিক, ওষুধ কারখানা ও বেশ কয়েকটি কয়লাখনি আছে। সব মিলিয়ে ইউক্রেনের শিল্প উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশের কেন্দ্র হচ্ছে এই দনবাস এলাকা, যা এখন রাশিয়ায় যুক্ত হবে।
রাশিয়ায় যুক্ত হওয়া ইউক্রেনের আরেক অঞ্চল জাপোরিঝঝিয়ায় আছে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৯-২০ বছরে এই অঞ্চল থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, যা ইউক্রেনের মোট বিদ্যুতের ২৫-২৭ শতাংশ। তাই এই এলাকাকে ইউক্রেনের শক্তিকেন্দ্র বলা হয়।
এ ছাড়া এই অঞ্চলে অনেক বৃহৎ শিল্প ও যান্ত্রিক প্রকৌশল সুবিধা আছে। এগুলোর অন্যতম জাপোরিঝঝিয়া অটোমোবাইল কারখানা থেকে বছরে দেড় লাখ গাড়ি তৈরি হয়। আজভ সাগর ও ডিনিপার নদীর অববাহিকা থাকায় এই অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময়।
জাহাজ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত খেরসন অঞ্চল। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও আছে এই অঞ্চলের বড় অবদান। এই অঞ্চলে খাদ্যশস্য, সূর্যমুখী ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয়। উর্বর জমি হওয়ায় এক মৌসুমে কখনো দুই বা তারও বেশি ফসল দিতে পারে। এ ছাড়া গবাদিপশু প্রজননেও এগিয়ে এই এলাকা।
এসব অঞ্চলে রাশিয়ার জন্য অবিশ্বাস্য কৃষি ও শিল্প সম্ভাবনা থাকলেও আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এসব এলাকার উন্নয়নে নতুন করে বড় বিনিয়োগ করতে হবে রাশিয়াকে। তা না হলে যে সম্ভাবনা আছে বলা হচ্ছে, তার সুফল পাবে না রাশিয়া। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া যদি এই অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করে স্থায়ী হতে পারে, তাহলে তারা দেশটির খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে রুশ অর্থনীতিতে লাখ কোটি ডলারের বেশি অবদান রাখতে পারবে এসব অঞ্চল।