সচিব নাজমা মোবারেকের এক ফোনেই আইডিআরএর ৪ সদস্যের পদত্যাগ

কারও মেয়াদই স্বাভাবিকভাবে শেষ হয়নি। দুজনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আরও সাত মাস পর। একজনের চুক্তি শেষ হতে বাকি ছিল দেড় বছর। আরেকজন যোগই দিলেন চলতি পঞ্জিকাবর্ষের জানুয়ারিতে, যাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালে। মেয়াদের আগেই তাঁরা আজ পদত্যাগ করেছেন।

এই চারজন হলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চার সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, মো. দলিল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম ও কামরুল হাসান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব নাজমা মোবারেকের এক ফোনেই তাঁদের চাকরি শেষ। আজ বিকেল চারটায় তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আড়াই মাস সচিব ছিলেন না। ফাঁকা ছিল এই পদ। দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে নাজমা মোবারেককে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদে গত ৩০ অক্টোবর বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেদিন ছিল বুধবার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, পরদিন বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েই নাজমা মোবারেক আগের মন্ত্রণালয়ে বিদায় সংবর্ধনা নিতে যান। ২ নভেম্বর থেকে তিনি মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সচিব হিসেবে নিয়মিত অফিস শুরু করেন।

এর তিন দিনের মাথায় গতকাল বুধবার তিনি নিজেই একে একে ফোন করেন আইডিআরএর চার সদস্যকে। ফোনে তিনি সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তাঁদের পদত্যাগ করতে বলেন। এমন কথাও বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব।’ সেই ফোনের এক দিনের মাথায় আজ আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে তাঁরা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

যোগাযোগ করলে সচিব নাজমা মোবারেক প্রথম আলোকে বলেন, আইডিআরএর চার সদস্যকে পদত্যাগ করতে গতকাল পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আজ তাঁদের পদত্যাগ করার কথা।

আইডিআরএ হচ্ছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা; এই সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক সচিব এম আসলাম আলম। আসলাম আলমকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদে সরকার নিয়োগ দিয়েছে দুই মাস আগে, অর্থাৎ গত ৯ সেপ্টেম্বর। যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় দেড় মাস অসুস্থতাজনিত ছুটিতে ছিলেন।

ফোন করে পদত্যাগ করানোর উদাহরণ আইডিআরএতে আগেও ছিল। যেমন গত ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন সংস্থাটির আগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। জয়নুল বারীকেও ৯ মাস বাকি থাকতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। তার আগের চেয়ারম্যান এম মোশারফ হোসেনও নির্ধারিত তিন বছরের মেয়াদ পার করে যেতে পারেননি। নিয়োগ পাওয়ার ১৫ মাসের মাথায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর উদ্যোগে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।

সূত্রগুলো জানায়, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য আইডিআরএতে সদস্য হিসেবে যোগ দেন চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালের ৩০ জানুয়ারি। তিনি ছিলেন (সদস্য) প্রশাসন। তিন বছরের জন্য নজরুল ইসলাম (সদস্য নন–লাইফ) ও কামরুল হাসান (লাইফ) কাছাকাছি সময়ে সংস্থাটিতে যোগ দেন।

অবসরে যাওয়া জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. দলিল উদ্দিন প্রথমবারের মতো আইডিআরএর সদস্য (আইন) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান ২০২০ সালের ১০ জুন। এক মেয়াদ শেষ হলে ২০২৩ সালের ৩০ মে দ্বিতীয় দফায় তাঁকে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।

সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ও মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। দুজনই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করার কথা জানিয়েছেন। আইডিআরএ কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হলেও সেগুলো আগামী রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যাবে বলে জানা গেছে।

এদিকে আজ সকালেই পদত্যাগকারী সদস্যদের বিদায় সংবর্ধনা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম।

আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম বলেন, চার সদস্য আজ পদত্যাগ করেছেন।