কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদন

স্মার্টফোন আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে

সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত বছর স্মার্টফোনের আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সামষ্টিক অর্থনীতিতে সংকট, বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাত, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও সম্প্রতি উৎপাদন থেকে বিক্রির সব স্তরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ করায় বিদায়ী বছরের শেষার্ধে স্মার্টফোনের বিক্রি কমে যায়।

হংকংভিত্তিক বৈশ্বিক শিল্প বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। দেশে স্মার্টফোন সংযোজনে নিয়োজিত একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, কাউন্টারপয়েন্ট আমদানির যে হিসাব দিয়েছে, তার মধ্যে স্মার্টফোনের পাশাপাশি স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশও রয়েছে। দেশে আমদানি যেটুকু কমেছে, প্রায় ততটুকুই বিক্রি কমেছে বললে ভুল হবে না।

কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে ২০২২ সালে দেশের মোবাইল ফোনের (স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন) বাজার ৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। যদিও ফিচার ফোনের বাজার ৪ শতাংশ বেড়েছে। তার বড় কারণ, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে স্মার্টফোনের মূল্যবৃদ্ধি। সে কারণে দেশে আমদানি হওয়া মোবাইল ফোনের মধ্যে স্মার্টফোনের হিস্যা হ্রাস পেয়েছে। গত বছর আমদানি হয়ে আসা মোট মোবাইল ফোনের মধ্যে স্মার্টফোন ছিল ৩৯ শতাংশ। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৬ শতাংশ।

স্মার্টফোন আমদানির (যন্ত্রাংশসহ) হিসাবে গত বছর শীর্ষে ছিল শাওমি। ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দ্বিগুণ আমদানি করেছে। সব মিলিয়ে দেশের স্মার্টফোনের বাজারে ১৮ শতাংশ হিস্যা নিয়ে শাওমি শীর্ষ স্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্যামসাংয়ের বাজার হিস্যা ১৩ শতাংশ। তারপর রিয়েলমি ১১ শতাংশ, ভিভো ১০ ও অপোর বাজার হিস্যা ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ফিচার ফোনে সিম্ফোনি। তাদের বাজার হিস্যা ৩৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্মার্টফোনের মধ্যে ফাইভ-জি স্মার্টফোনের আমদানি বাড়ছে। গত বছর ফাইভ–জি স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ইউনিট, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১৫১ শতাংশ বেশি। গত বছর যে পরিমাণ স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে, তার মধ্যে ১৭ শতাংশ ফাইভ-জি স্মার্টফোন, যা ২০২১ সালে ছিল মাত্র ৯ শতাংশ।

কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবও মিলছে। গত বছরের জানুয়ারিতে দেশে ৪১ লাখ মোবাইল ফোন উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে স্মার্টফোন ছিল ৩৩ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে উৎপাদিত হয় যথাক্রমে সাড়ে ১৭ লাখ মোবাইল ফোন। তার মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ স্মার্টফোন। আর বাকি ৮২ শতাংশই ফিচার ফোন। যদিও সব মিলিয়ে গত বছর ৩ কোটি ১৪ লাখ মোবাইল ফোন উৎপাদিত হয়েছে দেশে। তার মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ফোন বছরের প্রথম ছয় মাসে উৎপাদিত হয়েছিল।

আবার গত বছর দেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ৯৫২টি মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে জানুয়ারিতে আমদানি হয় ৬১ হাজার ৮৯১টি। তবে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ৪০৯টি, ২ হাজার ৫০০টি ও ২৭৭টি।

প্রসঙ্গত, দেশে দেশে এখন ১৪টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন সংযোজন করছে। দেশে বছরে স্মার্টফোনের চাহিদা এক কোটির মতো। চাহিদার বড় অংশই জোগান দেয় দেশে উৎপাদিত মুঠোফোন।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রিজওয়ানুল হক গত বছরের শেষ দিকে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, স্মার্টফোনের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে। বছরের চতুর্থ ভাগে ফোন বিক্রি এমনিতেই কম থাকে, তবে এবার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, এতটা কম হয় না। আগে ১৫ হাজারের বেশি দামের স্মার্টফোনের চাহিদা বেশি ছিল। এখন তা ১০–১৫ হাজারে নেমেছে।