শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে কাজ বন্ধ থাকা ৩৯টি তৈরি পোশাক কারখানার জন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলেছে, এসব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধের জন্য এ ঋণ প্রয়োজন।
গতকাল রোববার অর্থ উপদেষ্টার কাছে লেখা এক চিঠিতে এ অনুরোধ করেন বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। ওই চিঠির সঙ্গে সাভার-আশুলিয়া এলাকার ৩৯টি ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার একটি তালিকাও যুক্ত করে দেওয়া হয়।
চিঠিতে খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো দারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। ফলে এসব কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন সময়মতো পরিশোধ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এ কারণে তাদের জন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা জরুরি।
বিজিএমইএ জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সাভার-আশুলিয়া এলাকার ৩৯টি কারখানায় প্রায় ২০ দিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় স্থায়ী খরচ পরিশোধ করতে হয়। বন্ধ থাকা ৩৯টি কারখানায় ৫৬ হাজার ৩৫১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের শুধু বেতন-ভাতা বাবদ ৫৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে তৈরি পোশাক খাতের চলমান রপ্তানি আদেশগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ক্রেতার নির্ধারিত লিড টাইমের মধ্যে পণ্য রপ্তানি করতে না পারার কারণে রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার অনেক ক্রেতা মূল্যছাড় (ডিসকাউন্ট) দাবি করছেন।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ২০১৯ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে পোশাকশিল্প খাত। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রতিযোগী বিদেশি রাষ্ট্র ও দেশের একদল স্বার্থলোভী জনগোষ্ঠী দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাণিজ্য খাতকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ চলমান আছে।’
বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার পোশাকশিল্প কারখানাগুলোতে স্থানীয় লোকের সহায়তায় কিছু বহিরাগত ভাঙচুর, লুটতরাজসহ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন খন্দকার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ কারণে ৩৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে এবং অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করতে পারছে না।
এমন অবস্থায় দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি খাতকে টিকিয়ে রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি প্রতিষ্ঠানকে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে অর্থ উপদেষ্টার কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান খন্দকার রফিকুল ইসলাম।