প্রচণ্ড গরমে এয়ারকুলারের চাহিদাও বেড়েছে। গত শনিবার ঢাকার ধানমন্ডির ইলেকট্রো মার্টের বিক্রয়কেন্দ্রে
প্রচণ্ড গরমে এয়ারকুলারের চাহিদাও বেড়েছে। গত শনিবার ঢাকার ধানমন্ডির ইলেকট্রো মার্টের বিক্রয়কেন্দ্রে

জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ারকুলার, দাবদাহের প্রভাব

গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, একেকটি দোকানে এখন দিনে ২৫ থেকে ৩০টি এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে।  

ফ্যানের বাতাসে গরম কাটছে না। আবার শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি কেনার সামর্থ্যও নেই। দাবদাহে পড়েছেন মহাবিপদে। তাঁদের জন্য বিকল্প পণ্য হতে পারে এয়ারকুলার। এ কারণে গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে এয়ারকুলারের বিক্রি। তাতে দামও বেড়েছে পণ্যটির।  

এয়ারকুলার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যেটি পানিকে বাষ্পে পরিণত করে ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করে। এতে ঘর শীতল হয় দ্রুত। তবে যন্ত্রটি ব্যবহারে কিছুটা সাবধানী হতে হয়, তা না হলে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর ও গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এপ্রিলের প্রচণ্ড গরমে বাজারে এয়ারকুলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপে যাঁরা একটু কম বাজেটের মধ্যে গরম থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন, তাঁদের কাছে কদর বেড়েছে পণ্যটির। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে একটি এয়ারকুলারের দাম এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই সময়ে এয়ারকুলারের চাহিদা বেড়েছে ১০ গুণের বেশি। 

গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে এয়ারকুলার কিনতে আসা মালিহা ফাইরুজ নামের এক ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরমে বাসায় বাচ্চারা কষ্ট পাচ্ছে বেশি। এসি কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। এ জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে দেশীয় ব্র্যান্ডের একটি এয়ারকুলার কিনলাম।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এয়ারকুলারের মতো পণ্যের চাহিদা সারা বছর থাকে না। এমনকি সাধারণ গরমের মধ্যেও মানুষ এয়ারকুলার খুব বেশি কেনেন না। এয়ারকুলারেরে বেচাবিক্রি হয় গরম বেশি পড়লে। রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেটের ১১টি দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি দোকানে এখন দিনে ২৫ থেকে ৩০টি এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ সময়ে যেখানে ২ থেকে ৩টি বিক্রি হয়।

গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের রুহি ইলেকট্রনিকসের বিক্রেতা সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবার গরমের তীব্রতা বেশি থাকায় এয়ারকুলারের বিক্রিও বেড়েছে। খুচরায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে। গতবারের চেয়ে বিক্রি দ্বিগুণ। গত এক সপ্তাহে মাঝারি মানের একটি এয়ারকুলারের দাম এক থেকে দুই হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

বিক্রি বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায় নবাবপুরের পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও। নবাবপুরের চারটি দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারিতে গত এক সপ্তাহে কোনো কোনো দোকানে দিনে অর্ধশতাধিক এয়ারকুলারও বিক্রি হয়েছে।

বাজারের যেসব এয়ারকুলার পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিক্রি হচ্ছে গ্রি ব্র্যান্ডের এয়ারকুলার। পাশাপাশি মিয়াকো, সিম্ফনি, কেনস্টার, ভিশন, ওয়ালটন ও নোভা ব্র্যান্ডের এয়ারকুলারের বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে।

গ্রি ব্র্যান্ডের ৪০ লিটারের একটি মাঝারি মানের এয়ারকুলার খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যেটা ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা ছিল। গ্রি ব্র্যান্ডের ৬০ লিটারের একটি এয়ারকুলারের দাম ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা।

ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেড দেশে গ্রি ব্র্যান্ডের এয়ারকুলার বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানটি কিস্তি, বিক্রয়োত্তর সেবাসহ নানা সুবিধা দেয় এ পণ্য বিক্রিতে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আকারভেদে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২২ হাজার টাকায় এয়ারকুলার বিক্রি করছে তারা।

জানতে চাইলে ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত গরম পড়ায় এবার এয়ারকুলারের বাজারে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বাজারে ৪০ লিটারের এয়ারকুলারের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে। ডলারের দাম বেশি থাকায় আমদানি করা পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে দেশে বছরে এক লাখের মতো এয়ারকুলার বিক্রি করে।

দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের এয়ারকুলার আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১০০ থেকে ১৫ হাজার ৯০০ টাকায়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্র্যান্ড ভিশনের এয়ারকুলারের দাম ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা।

বাজারে মিয়াকো ব্র্যান্ডের ৪৫ লিটারের একটি এয়ারকুলারের দাম ২৬ হাজার টাকার আশপাশে। নোভা ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ১২ লিটারের একটি এয়ারকুলারের দাম ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ট্রান্সকম ডিজিটাল বিক্রি করছে সিম্ফনি ব্র্যান্ডের এয়ারকুলার। দাম ১৩ হাজার ৯০০ থেকে সাড়ে ১৭ হাজার টাকার মধ্যে।