প্রতিবেদনটিতে দেশের রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশের বস্ত্র খাতে অটোমেশনের মতো উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার ১ শতাংশের কম। এমন তথ্যই উঠে এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে ২০২১ সালের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বস্ত্র খাতে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারে ১ শতাংশের কম স্কোর নিয়ে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছে।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গতকাল রোববার ‘বৈশ্বিক মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের রূপান্তর’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে এডিবি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বস্ত্র খাতে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার মাত্র শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ। যেখানে ভারতের বস্ত্র খাতে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। পাকিস্তানে তা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ ও মালদ্বীপে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার বলতে মূলত অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পপণ্য খাতে বাংলাদেশের অবস্থান সুবিধাজনক নয়। এ খাতে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ। যেখানে ভারতের স্কোর ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ খাতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান, স্কোর ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর চামড়া খাতে মালদ্বীপের উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো নজির এডিবির প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।
প্রতিবেদনে আরও বেশ কয়েকটি খাতে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিমান পরিবহন, পরিবহন উপকরণ, নির্মাণ খাত, রবার ও প্লাস্টিক, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য। এসব খাতের অবস্থাও নাজুক। তবে কম্পিউটার সেবা ও তথ্য, টেলিযোগাযোগ ও কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক ও অপটিক্যাল উপকরণ—এই তিন খাতের অবস্থা তুলনামূলক ভালো।
এডিবির প্রতিবেদনের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলবার্ট এফ পার্ক, এডিবির জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ মাহিনথান জে মারিয়াসিংহাম ও এডিবির অর্থনীতিবিদ পারমিলা এ শ্রীভেলি। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাব আছে। যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভালো। রপ্তানি পণ্যের মূল্য সংযোজন কম হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
এডিবির প্রতিবেদন নিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে জোর দেওয়া হয়েছে, সরকারেরও
এ বিষয়ে পরিকল্পনা আছে। সেভাবে কাজও এগোচ্ছে। যেমন সম্প্রতি চামড়া, পাট, ওষুধ ও ইলেকট্রনিকের মতো খাত থেকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের মতো রপ্তানি আয়ও এসেছে। তাতে আমরা আশাবাদী। পোশাকশিল্পের পাশাপাশি অন্য খাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। এফডিআই এলে শুধু পুঁজি আসে না, সঙ্গে প্রযুক্তি ও দক্ষতাও আসে।’
প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ বিদ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ঠিক রাখতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ইনস্টিটিউটের আরেফ সুলেমান প্রমুখ।