দেশে গত মার্চ পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৭৬৫টি এসইউভি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর ৬৭ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে ২০১১ সালের পর।
বাংলাদেশের বাজারে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) বিক্রি বাড়ছে। ২০২২ সালে ১০ হাজার ২৪০টি এসইউভি নিবন্ধিত হয়েছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গাড়ি বিপণনকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই একটু বাড়তি আয়ের ক্রেতারা এখন সেডান কারের বদলে এসইউভি কেনার চেষ্টা করছেন। কারণ, এসইউভিতে চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। দূরের পথে যাত্রায় এই গাড়িকে বেশি নিরাপদ মনে করেন ব্যবহারকারীরা।
মিতসুবিশি বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (হেড অব মার্কেটিং) মোহাম্মদ ফাহিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের গাড়ির ক্রেতারা মহাসড়কে একটু বড় গাড়ি নিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ কারণে ক্রেতারা এসইউভি অথবা সমজাতীয় (ক্রসওভার) গাড়ি কিনতে চান।
বাংলাদেশে জিপ নামে যে গাড়ি পরিচিত, সেটা আসলে এসইউভি। জিপ গাড়ির একটি ব্র্যান্ডের নাম। এসইউভি গাড়ির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এটির গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বেশি হয়। অর্থাৎ এ ধরনের গাড়ির চাকা বড় হয়, যাতে গাড়ির কাঠামো মাটি থেকে বেশ উঁচুতে থাকে। এসইউভির আকার সাধারণ সেডান কার থেকে বড় হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই গাড়ির চারটি চাকায় শক্তি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে।
গাড়ি বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, এসইউভির ইঞ্জিনক্ষমতা বেশি হয়। এ ধরনের গাড়ি উঁচু, নিচু রাস্তায় সহজে চলাচল করতে পারে।
এসইউভির কাছাকাছি গাড়ির একটি ধরন হলো ‘ক্রসওভার’। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এসইউভির চেয়ে একটু ছোট ও সেডান কারের চেয়ে একটু বড় আকার এবং মাঝামাঝি উচ্চতার গাড়িকে বলা হয় ‘ক্রসওভার ইউটিলিটি ভেহিকেল (সিইউভি)’। এ ধরনের গাড়ি তৈরি হয় সেডান কারের চেসিসের ওপর বাড়তি ‘গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স’ দিয়ে। এসইউভিতে জ্বালানি ব্যয় বেশি, যা সিইউভিতে কিছুটা কম। দামও এসইউভির চেয়ে কম।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এসইউভি নিবন্ধন দেয় জিপ শ্রেণির আওতায়—হার্ড ও সফট। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব এসইউভির ছাদ শক্ত নয়, বরং মোটা কাপড় বা তেরপল দিয়ে ঢাকা থাকে, তাকে সফট শ্রেণিতে ফেলা হয়। সাধারণত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ধরনের এসইউভি ব্যবহার করে। আর যেসব এসইউভির ছাদ স্থায়ী, সাধারণ গাড়ির মতো, সেগুলোকে হার্ড শ্রেণিতে নিবন্ধন দেওয়া হয়।
বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৮৪ হাজার ৭৬৫টি এসইউভি নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর ৬৭ শতাংশই নিবন্ধিত হয়েছে ২০১১ সালের পর। নিবন্ধনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসইউভি নিবন্ধন বেশি বেড়েছে গত সাত বছরে। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধিত হয় ২০২১ সালে ৭ হাজার ৬০২টি ও ২০২২ সালে ১০ হাজার ২৪০টি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১ হাজার ৯৮৭টি এসইউভি নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ।
গাড়ি বিপণনকারী কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে এসইউভি কেনার প্রবণতা বেশি। কারণ, তাদের নিয়মিত কারখানায় যেতে হয়। দূরের পথে যাত্রায় নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাঁরা এসইউভি কেনেন। আবার ২০১৭ সালে সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের গাড়ি কিনতে বিনা সুদে ঋণসুবিধা দেওয়ার পর থেকে সিইউভি বিক্রি বেড়েছে।
একটি গাড়ি বিপণনকারী কোম্পানির একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকে সিইউভি কিনছেন। কারণ, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সিইউভি কিনতে আগ্রহ দেখান।
দেশে বিভিন্ন দামে এসইউভি ও ক্রসওভার বিক্রি হয়। চীনা ব্র্যান্ডের এসইউভি ও ক্রসওভারের দাম কম, জাপানি ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়ির দাম বেশি। সাধারণত চীনা ব্র্যান্ডের সিইউভির দাম শুরু হয় ৩০ লাখ টাকা থেকে। পুরোনো জাপানি ব্র্যান্ডের সিইউভি কেনা যায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে। নতুন জাপানি ব্র্যান্ডের সিইউভির দাম ৪০ লাখ টাকা থেকে শুরু, ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অবশ্য এর চেয়ে অনেক বেশি দামি ও কয়েক কোটি টাকা দামের গাড়িও বাজারে আছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গাড়ির বাজারে সরবরাহ এখন কম। দামও বেড়েছে। কারণ, মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। ডলার–সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র খোলা কম হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে নতুন ঋণপত্রের বিপরীতে যেসব গাড়ি আসবে, সেগুলোতে ডলারের দামের পুরো প্রভাব পড়বে। উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসের শুরুতে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকার আশপাশে, যা এখন ১০৫ টাকার বেশি।
বাংলাদেশে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়ির একমাত্র পরিবেশক ডিএইচএস মোটরসের মহাব্যবস্থাপক ও হেড অব সাপ্লাই চেইন আরমান রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি গাড়ির বাজারদরের ৯০ শতাংশই আমদানিমূল্য। বাকিটা প্রশাসনিক ও অন্যান্য খরচ। ডলারের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক।