কোরবানির পশুর চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পচন রোধে নাটোর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আড়ত পর্যায়ে সংরক্ষণের সুবিধা চান কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলে অব্যবহৃত সংরক্ষণের সুবিধা আধুনিকায়নের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে চামড়া সংরক্ষণের সংকট দূর করা সম্ভব। এতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কোরবানির পশুর চামড়া নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে আয়োজিত হাইড অ্যান্ড স্কিন, লেদার ও লেদার গুডস অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল লেদার–বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় এসব কথা উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক শাহীন আহমেদ। কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম। খবর বিজ্ঞপ্তি
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী। তিনি বলেন, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে সরকারকে প্রতিটি জেলায় সংরক্ষণব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনে এই উদ্যোগে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে চামড়াশিল্পের শতভাগ কমপ্লায়েন্স (নিয়মকানুনের মান্যতা) নিশ্চিত করতে হবে। শুধু রপ্তানি বাজারের জন্য নয়, নিজেদের জন্য পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় চামড়াশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন মো. আমিন হেলালী।
নিয়মকানুনের মান্যতা নিশ্চিত করতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পপল্লি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও সেখানে সিইটিপি বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। দুর্বলতা আছে কঠিন বর্জ্য (সলিড ওয়েস্ট) ব্যবস্থাপনায়ও। আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ছাড়পত্র (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট) পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বড় বাধা। স্ট্যান্ডিং কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে এটিই অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়াশিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ায় জোর দেন কমিটির চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। রপ্তানি বৃদ্ধিতে চীনসহ পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সভার মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে অর্থায়নের ব্যবস্থা, ডিজাইনারসহ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী তৈরি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, পাদুকা শিল্পপল্লি স্থাপন, আধুনিক কসাইখানা স্থাপন, দেশে প্রচলিত ছুরি ও যন্ত্রপাতি উন্নয়ন ও কসাইদের প্রশিক্ষণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য অভিন্ন প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন, লেদার টেকনোলজি বিষয়ে শর্ট ডিপ্লোমা কোর্স ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা, হাইড অ্যান্ড স্কিন ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ, সাভার চামড়াশিল্প নগরীর পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্তির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, চামড়াশিল্প ব্যবস্থাপনা আইনবিষয়ক জাতীয় কমিটিতে সব অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন-অর-রশিদ, আজিজুল হক, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।