ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে ইস্পাতশিল্পের মালিকদের বিনিময়জনিত আর্থিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা ১৫ বছরে কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ চেয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এ সুবিধা চান ইস্পাতশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) নেতারা। এ ছাড়া সিমেন্টশিল্পের মালিকেরা স্বল্পমেয়াদি ও চলতি মূলধন ঋণ এবং পরিশোধযোগ্য আমদানি বিলকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর সুবিধা চেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ দুপুরে সিমেন্টশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) ও বিএসএমএ নেতাদের সঙ্গে যৌথ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই সংগঠনের নেতারা আলাদাভাবে তাঁদের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের নানা অসুবিধার কথা তুলে ধরে লিখিত প্রস্তাবও জমা দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএর সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সভাপতি মানোয়ার হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ, বিসিএমএর সভাপতি মো. আলমগীর কবির প্রমুখ।
বিএসএমএর প্রস্তাবে বলা হয়, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি, ডলার–সংকট ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ঋণপত্র খুলতে সমস্যা, সুদহার বৃদ্ধি, কাঁচামাল–সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা সংকটে এ খাতের শিল্পমালিকেরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১৮ থেকে ১২৫ টাকায় উন্নীত হওয়ায় ইস্পাতশিল্পের মালিকেরা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছেন। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ, ব্যাংকঋণের কিস্তি শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ শিল্পের মালিকদের। তাই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের আর্থিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়মিত ব্যাংক হিসাবের বাইরে আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের পাশাপাশি ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরে কিস্তিতে পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। এ ছাড়া ইস্পাতশিল্পে বর্তমান গ্রাহক ঋণসীমা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ, স্বল্পমেয়াদি ঋণকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর, ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নগদ জমা বা এলসি মার্জিন–সুবিধা ৫ শতাংশ নির্ধারণ ও ঋণপত্রের সীমা বৃদ্ধি এবং কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা সহজ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
* ইস্পাত খাতে বর্তমানে মোট বিনিয়োগ ৬০ হাজার কোটি টাকা।* ইস্পাতশিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান ১০ লাখ লোকের।* সিমেন্ট খাতে বর্তমানে মোট বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি টাকা।* সিমেন্টশিল্পে বর্তমানে কর্মসংস্থান রয়েছে লক্ষাধিক লোকের।
সিমেন্টশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমএর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সিমেন্টশিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা, সিমেন্ট খাতের জন্য ঋণপত্রের সীমা সহনীয় করা, এ খাতকে অগ্রাধিকার খাত ঘোষণার মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা সহজ ও দ্রুত করা। এ ছাড়া ব্যাংক নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি নগদায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার প্রস্তাব করে বিসিএমএ।
গভর্নরকে দেওয়া প্রস্তাবে বিসিএমএ বলেছে, সিমেন্টশিল্পে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই শিল্পে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে সিমেন্ট।
এদিকে ইস্পাতশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিএসএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের ছোট-বড় মিলিয়ে ইস্পাতশিল্পে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯০। এর মধ্যে ৪০টি অত্যাধুনিক কারখানা। এ শিল্পে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে এ শিল্পে। ইস্পাতশিল্পের কাঁচামালের ৮৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর।