দুই ঈদের সময় দেশে ফ্রিজের চাহিদা বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলোও এ সময় বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে এবার দেশের ফ্রিজের বাজারের কী পরিস্থিতি, তা নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে প্রথম আলো। বিশেষ এই আয়োজনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মো. নুরুল আফছার
দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজার কি বড় হচ্ছে? বর্তমানে কী ধরনের রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বাড়ছে। আপনারা কি সেই চাহিদা মেটাতে পারছেন?
মো. নুরুল আফছার: দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বড় হচ্ছে রেফ্রিজারেটরের বাজার। তবে এখন মাঝারি আকারের রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বাড়ছে। আমরা সর্বদা দেশীয় পরিবেশ ও গ্রাহকদের চাহিদার সঙ্গে মানানসই ডিজাইনে পণ্য তৈরি করি। প্রতিটি পণ্যই বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়, যা বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। ফলে আমাদের প্রতিটি পণ্যই গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ডলারের সংকট ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসার খরচ কেমন বেড়েছে গত দুই বছরে? এ জন্য রেফ্রিজারেটরের দাম কেমন বাড়াতে হয়েছে? আর দাম বাড়ানোর কারণে কি বিক্রিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে?
মো. নুরুল আফছার: রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে পণ্যের মূল্যে কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। আমরা পরিকল্পিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছি। তাই পণ্যমূল্যে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সীমিত প্রভাব পড়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এবং গ্রামীণ পর্যায় পর্যন্ত শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
আপনাদের বার্ষিক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন সক্ষমতা কত? এই সক্ষমতার কতটা ব্যবহার হচ্ছে? নতুন করে রেফ্রিজারেটর খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে কি না?
মো. নুরুল আফছার: আমাদের বছরে তিন লক্ষাধিক রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এই সক্ষমতার বড় অংশ উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি ও কারিগরি উন্নয়নের ফলে এই খাতে আমাদের নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে। আমরা ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছি।
দুই ঈদকে কেন্দ্র করে রেফ্রিজারেটর বিক্রি বাড়ে। আপনারা বিক্রি বাড়াতে কী ধরনের অফার দিচ্ছেন? এবারের ঈদে আপনাদের কত ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে?
মো. নুরুল আফছার: দেশে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজারের মোট বার্ষিক চাহিদার ২৫-৩০ শতাংশ ঈদের সময় বিক্রি হয়। আমাদের একটি অফারে একজন ক্রেতা তাঁর আইডি কার্ড দেখিয়ে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পেতে পারেন। আবার স্ক্র্যাচ কার্ড অফারে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ মূল্যছাড় রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫টি ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে এবং মাসিক ৩ থেকে ১৮ মাসের কিস্তিতে আমাদের ফ্রিজ কেনা যায়। আমাদের কাছ থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে।
বর্তমানে আপনারা কোন প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর বানাচ্ছেন? আগামী দিনে নতুন কোনো প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর বাজারে আনার পরিকল্পনা কি আছে?
মো. নুরুল আফছার: আমাদের কনকা ও হাইকো রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজারে রয়েছে ব্লু-জোন অ্যান্ড ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি, অ্যাকটিভেটেড কার্বন ডিয়োডোরাইজার, হিউমিডিটি কন্ট্রোলার, এন্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাস্কেট, ডিজিটাল ডিসপ্লে ইনভার্টার টেকনোলজি, কনকা ডিপ ফ্রিজার ডুয়েল মোড টেকনোলজি প্রযুক্তি। এ ছাড়া আমাদের ফ্রিজে ফেস-আপ ফোমিং টেকনোলজি, হিউমিডিটি কন্ট্রোলার, ওয়াইড ভোল্টেজ রেঞ্জ, ডাবল ইলেকট্রিক প্রটেকশন, ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি ডোর অ্যালার্ম টেকনোলজি-এসব প্রযুক্তি সুবিধা রয়েছে।
দেশের সাধারণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের পণ্যের আধুনিকায়ন করছি। এ আধুনিকায়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে আরঅ্যান্ডডি। কীভাবে আরও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা যায় এবং দেশীয় প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করতে পারি, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আবহাওয়া, পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভিন্ন। যেমন আমাদের দেশে ইঁদুর আছে, যেটা অন্যান্য দেশে খুব একটা নেই। এ রকম নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে আমরা ফ্রিজের ডিজাইন করি। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট একটি নৈমিত্তিক ঘটনা; যে কারণে ডাবল লেয়ার প্রোটেকশনের মাধ্যমে আমাদের ফ্রিজের কম্প্রেসরকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ রকম আরও অনেক বিষয় আছে, যা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। এভাবেই আমরা নিত্যনতুন প্রযুক্তি সংযোজন করছি।