মশা বাড়ছে। সেই সঙ্গে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ছে। কয়েল, অ্যারোসল কিংবা ক্রিম ব্যবহার করেও সুরক্ষা মিলছে না মশার হাত থেকে। তাতে অনেকেই মশা মারতে ছোট ‘কামান’ হিসেবে পরিচিত বৈদ্যুতিক র্যাকেট বা ব্যাট হাতে তুলে নিচ্ছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্যটির আমদানি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার ৯ লাখ ৭৯ হাজার মশার ব্যাট আমদানি হয়েছে। আমদানিতে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শুল্ককরসহ আমদানি খরচ সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।
বিক্রেতারা জানান, মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট অন্তত ২০০ বার রিচার্জ করা যায়। ব্যাটের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করে মশা মারা হয়। ছোট জায়গায় মশা মারতে খুব ভালো কাজ দেয় এই ব্যাট। এতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও গ্যাস নেই বলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হয় না। এ কারণে মশার ব্যাটের বাজার বাড়ছে।
আমদানিনির্ভর এই পণ্যের দাম এখন বাড়তি। খুচরা বাজারে বছরখানেক আগেও প্রতিটি ব্যাট ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন ব্র্যান্ডভেদে প্রতিটি ব্যাট ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর আমদানি হওয়া সাড়ে ১০ লাখ মশার ব্যাটের হিসাব ধরে এ ব্যাটের বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মশা মারার ছোট কামানে এ দেশের মানুষের বছরে খরচ ৪৫ কোটি টাকা। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে মশার ব্যাটের বিক্রিও বাড়ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান রেইনবো টাইম সেন্টারের কর্ণধার এস এম দিদার প্রথম আলোকে বলেন, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এখন মশার ব্যাটের বিক্রিও বেশি। বছরের এ সময়টা বিক্রি বেশি হয়। ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধির কারণে দামও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
আমদানিকারকদের তথ্য অনুযায়ী, ছয় বছর আগে চীন থেকে মশার ব্যাট আমদানি শুরু হয়। ধীরে ধীরে ভারত, যুক্তরাজ্য, হংকং ও থাইল্যান্ড থেকেও আমদানি হচ্ছে এ ব্যাট। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬৮ লাখ মশার ব্যাট আমদানি হয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ ডলার।
মশার ব্যাটের বাজার বাড়তে থাকায় ইলেকট্রনিকস পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যতালিকায় যুক্ত করেছে এই পণ্য। প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ ভিশন, ক্লিক, ভিগো ও ব্লেইজ ব্র্যান্ডের নামে মশার ব্যাট বাজারজাত করছে। প্রতিটির দাম ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকা। ওয়ালটন গ্রুপ অত্যাধুনিক মশার ব্যাট বাজারজাত করছে প্রতিটি ৮৬০ টাকায়। মার্সেল ও মিনিস্টার কোম্পানিও তাদের পণ্যতালিকায় তুলেছে মশার ব্যাট। ভারতীয় কোম্পানি গোদরেজ হিট অ্যান্টি মসকিউটো র্যাকেট বাজারজাত করছে বাংলাদেশে।
বিক্রেতারা জানান, মশা মারার ব্যাট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, মশা মারার ব্যাটও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। গত বছর ফেনীতে মশা মারার ব্যাট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হন। জানা যায়, ওই বাসার বদ্ধ ঘরে গ্যাস লিকেজ হয়ে জমতে থাকে। মশার ব্যাট চালুর পর স্পার্ক হয়ে জমতে থাকা গ্যাসে আগুনের সূত্রপাত হয়।
দীর্ঘদিন ধরে মশা মারার ব্যাট ব্যবহার করছেন চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ছোট্ট কক্ষে মশা মারার জন্য কার্যকর মশার ব্যাট। মশারি টাঙানোর পর ভেতরে মশা থাকলে ব্যাটই ভরসা। মশা মারার জন্য অন্য উপকরণ ব্যবহার করলেও ব্যাট খুব কাজে দেয়।