দেশে তৈরি পোশাকের পরে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হলো চামড়া। কিন্তু এই খাতে রপ্তানি আয় আসছে মাত্র ১০০ কোটি ডলারের মতো। মূলত সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে উন্নত কর্মপরিবেশ না থাকায় রপ্তানি আয় বাড়ছে না। আর চামড়া খাতে যোগ্য কোনো অভিভাবক না থাকায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে না।
আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি হোটেলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকারখানাগুলোর উন্নত কর্মপরিবেশ অর্জন বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, চামড়া খাতের বর্তমান বৈশ্বিক বাজার ২৫০ বিলিয়ন বা ২৫ হাজার কোটি ডলারের ওপরে। এই শিল্প খাত থেকে বাংলাদেশের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি অর্জন করতে হলে প্রতিবছর এই খাতে ৪০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেশের চামড়া খাতের রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘শুধু উন্নত কর্মপরিবেশ ও পরিবেশবান্ধব শিল্প উৎপাদন না থাকায় রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের চামড়াশিল্প খাতের উন্নয়নে নীতিগতভাবে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু যোগ্য অভিভাবক না থাকায় সেগুলো বাস্তবায়নের হার কম। তাই আমাদের নীতি বাস্তবায়নে এখন বেশি জোর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পরিবেশদূষণের কারণ দেখিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়া কারখানাগুলোকে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ এখন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিনেও চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) থেকে সনদ পাচ্ছে না কারখানাগুলো। এই অব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে (বিসিক) দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।
যোগ্য কোনো অভিভাবক না থাকায় চামড়া খাতের সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে না, এই অভিযোগ করে সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বিসিকের পরিবর্তে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলে চামড়া খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করে রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়াশিল্পের মান উন্নয়নে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। ফলে এসব সভা–সেমিনারে বরং সময় নষ্ট হয়। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি চামড়া উন্নয়ন বোর্ড গঠনের পরামর্শ দেন।
সিইটিপি পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানি (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি)। এই কোম্পানির বিরুদ্ধে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ তোলেন শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, সিইটিপি ঠিকভাবে কার্যকর রাখতে পারছে না বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানি। এভাবে একটি কোম্পানি চলতে পারে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘সিইটিপি নিয়ে একটা সমস্যা তো হয়েই গেছে। এখন কীভাবে দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করা যায়, সেই পথে এগোতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা চলছে। আপনাদের (ট্যানারি মালিক) প্রস্তাবগুলোও আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব।’
ডিটিআইইডব্লিউটিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, সিইটিপির সমস্যা সমাধান করতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কিন্তু বেপজা বা অন্য কাউকে দিলে সেই কাজ বিনা মূল্যে করে দেবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও সরকারি অনুমোদন পেলে ছয় মাসের মধ্যেই সিইটিপিকে পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান দিলজাহান ভূঁইয়া, বিটিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।