রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন দেওয়ার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। তারা সোহেল রানার জামিন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনস হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শেষ করতে অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক ফ্রন্ট।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।
বিবৃতিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট বলেছে, ভবন নির্মাণের নিয়ম না মেনে প্রভাব খাটিয়ে ডোবা জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিলেন সোহেল রানা। ভবনে ফাটল দেখা দিলেও সেখানে যেসব গার্মেন্টস কারখানা ছিল, তার মালিকদের সঙ্গে জোট বেঁধে শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। এরপর ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যু, তিন সহস্রাধিক পঙ্গু আর শত শত শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক যুগ পার হতে চললেও সোহেল রানা ছাড়া দায়ীদের আর কেউ কারাগারে নেই।
এখন পর্যন্ত সেই ঘটনার বিচার হয়নি। বিচারহীনতার এই দৃষ্টান্তের কারণে কারখানা মালিকেরা এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে যথেষ্ট উদ্যোগী হননি বলে শ্রমিক ফ্রন্টের অভিযোগ।
শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার উচ্ছেদ হওয়ার পর শ্রমিকেরা যখন নিয়ন্ত্রণমুক্ত নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, অবহেলাজনিত কারণে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুর ন্যায্য বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন, সেই সময় সোহেল রানাকে জামিন দেওয়া জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনার বিরোধী। শ্রমিক সংগঠনটি কালবিলম্ব না করে জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে সোহেল রানার জামিন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কীভাবে সোহেল রানার জামিন হলো, তার তদন্ত দাবি করেছে সংগঠনটি।
শ্রমিক ফ্রন্ট বলেছে, যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, মৎস্যজীবী লীগ নেতা দেলোয়ারসহ রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশনস হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এই সরকারও ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকবে।
শ্রমিক নেতাদের দাবি, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করে কার্যকর আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক হত্যার বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।
সোহেল রানার জামিন বাতিল, বিচার ত্বরান্বিত করা, শ্রমিক হত্যার বিচার ও শ্রম প্রশাসনের আমূল সংস্কারের দাবিতে আগামী শুক্রবার বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিক নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই বছরের ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে ভবনের মালিক সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।