ঢাকা জেলার ধোলাইখাল ও জিনজিরায় বহুসংখ্যক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ আছে। বলা হয়ে থাকে যেকোনো জিনিসের নমুনা বা স্যাম্পল দিলে চৌকস কারিগরেরা সেগুলো বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে এখন আর শুধু কপি প্রোডাক্ট নয়, নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সরঞ্জাম প্রস্তুত করছেন নিজেদের ওয়ার্কশপে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘বাস্তব-ইনিশিয়েটিভ ফর পিপলস সেলফ ডেভেলপমেন্ট’-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়, সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের (এসইপি) আওতায় ঢাকা জেলার জিনজিরা ও ধোলাইখালের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা শুধু পণ্য উৎপাদন নয়, প্রচারণা ও বিপণন করছেন।
প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার লক্ষ্যে বাস্তব-এর আয়োজনে ৩১ মে থেকে ১ জুন হয়ে গেল দুই দিনব্যাপী একটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মেলা।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের ও বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির (বাইশিমাস) সহসভাপতি সারোয়ার হাসান এবং বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিমা) সভাপতি মো. আফতাব জাবেদ
বাংলাদেশে এ রকম লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ আছে প্রায় ৪০ হাজার, এর মধ্যে ১০ হাজার ওয়ার্কশপ জিনজিরা ও ধোলাইখালের দনিয়া, রুহিতপুর, আটিবাজার, খোলামোড়া ও রাজেন্দ্রপুর এলাকায়। তাই এই খাতে কাজের সুযোগ এবং সম্ভাবনা এখনো অনেকটাই অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘সারা বিশ্বে ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় একটা খাত, তার চেয়েও বড় খাত এর মার্কেটিং এবং বাজারজাতকরণ। এ সময় জিডিপির ২৫ শতাংশ আসছে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানুফ্যাকচারারদের কাছ থেকে। আমরা গত তিন বছরে বিভিন্ন ক্লাস্টার তৈরি করে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। এই টাকাটাই এখন ধোলাইখাল ও জিনজিরার ইঞ্জিনিয়ারদের ভেতরে সার্কুলেট হচ্ছে। কিন্তু এই খাতে বিনিয়োগ দরকার আসলে ৬-৭ হাজার কোটি টাকা। তাহলেই এই ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে।’
মো. আফতাব জাবেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের তৈরি পণ্য পুরো বাংলাদেশে এবং বিদেশেও ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সেই সক্ষমতা আছে। সরকার যদি আমাদের ঠিকঠাক সাহায্য করে এবং ঋণসুবিধা দেয়, তাহলে আমরা আমাদের পণ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারব।’
এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য পরিবেশগতভাবে টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা, উৎপাদিত পণ্যের প্রচার ও বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করা, শ্রমিকদের জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য কারখানা বর্জ্যের বিকল্প ব্যবহার প্রচার করা এবং ভোক্তা ও বাজারে চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির জন্য একটি ব্র্যান্ড গড়ে তোলা।
ওয়ারী নারিন্দার ফকির চান সরদার কমিউনিটি সেন্টারে ৩১ মে থেকে ১ জুন প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে এই মেলা।