যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে
যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে

বাংলাদেশের রপ্তানি ১,২০০ কোটি ডলারে নেওয়া সম্ভব: র‌্যাপিড

২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশের বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ২০৩০ সালে এই বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেওয়া সম্ভব। যার মধ্যে শুধু পোশাকেরই রপ্তানি হবে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার।

গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) ও যুক্তরাজ্য সরকারের এফসিডিও-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া গেলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ২০৩০ সাল নাগাদ ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়ে। যার মধ্যে শুধু পোশাকেরই রপ্তানি হবে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। দেশটি সম্প্রতি ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিটিসিএস) ঘোষণা দিয়েছে। তাতে দেশটির বাজারে বাংলাদেশ ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা পাবে।

ডিসিটিএস যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এলডিসি উত্তরণের পরও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করবে উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের জন্য এই সুবিধা একই সঙ্গে পোশাক খাত ছাড়া চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল শিল্প, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত মাছ শিল্পের মতো খাতগুলোর জন্য বড় একটা সুযোগ।’

সেমিনারে যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি বাড়াতে র‌্যাপিডের পক্ষ থেকে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—দেশটির বাজারে পোশাক খাত বহির্ভূত রপ্তানি সম্প্রসারণের সুবিধার্থে বাজারবিষয়ক তথ্যের (শুল্ক-মুক্ত সুবিধা, মূল বিধানের নিয়ম, প্রয়োজনীয় মান ইত্যাদি) প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। যুক্তরাজ্যের পণ্য প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া পাইকারি বাজারের সঙ্গে দেশটির খুচরা বাজারেও পণ্য রপ্তানিতে উদ্যোগ নেওয়া, কম খরচে স্থানীয়ভাবে পণ্য পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানো, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে পশ্চাৎ শিল্পের উন্নয়ন, শুল্ক যুক্তিযুক্ত, প্রণোদনার ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা উত্তরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিকারকেরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত, কিন্তু যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএস সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে, এ থেকে রপ্তানিকারকেরা সুবিধা নিতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর উচ্চ আমদানিশুল্ক ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়কেই বাজারের সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে নিরুৎসাহিত করে। তাই সরকার ট্যারিফ যৌক্তিক করার কাজ করছে।

এফসিডিওর উপপরিচালক ডানকান ওভারফিল্ড বলেন, বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা যুক্তরাজ্যের বাজারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়বে। যেমনটি হংকং ও চীনের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের বাজার ধরতে গেলে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নীতিগতগুলো বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষ সুবিধাগুলো অনুসন্ধান করতে হবে।

রপ্তানি বৈচিত্র্য বাড়াতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, যুক্তরাজ্যের বাজারে ভোক্তা চাহিদা মেটানোর জন্য অব্যবহৃত রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে প্যাকেজিংয়ের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের প্রধান মো. নসরুল্লাহ, ওয়ালটন গ্রুপের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুর রউফ, র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ প্রমুখ।