আগামী বছরের শুরুতে বিশ্বে খাদ্যঘাটতি হতে পারে

নিত্যপণ্য
নিত্যপণ্য

বিশ্ববাজারে খাদ্যমূল্য পাঁচ মাস ধরে কমছে। আগস্ট মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৩৮ পয়েন্ট, জুলাই মাসের চেয়ে যা ১ দশমিক ৯ শতাংশ কম। তা সত্ত্বেও গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় এ বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যসূচক ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়তি। এ বছর খাদ্যমূল্য বাড়লেও খাদ্যস্বল্পতা নেই। কিন্তু আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চলতি বছর শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, জলবায়ুগত কারণেও হচ্ছে। এ বছর বিশ্বজুড়েই প্রচণ্ড গরম পড়েছে। ইউরোপীয় খরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (ইডি) তথ্যানুসারে, আর্দ্রতা হারিয়ে ইউরোপের ৪৭ শতাংশ এলাকার মাটি শুকিয়ে গেছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে আগামী বছরের শুরুতে খাদ্যস্বল্পতার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের বে অব বেঙ্গল রিজিওনাল ট্রেড অ্যান্ড কানেক্টিভিটি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম বা বঙ্গোপসাগর আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ সক্ষমতা নির্মাণ কর্মসূচির অধীনে বৈশ্বিক খাদ্যবাজার নিয়ে আয়োজিত অধিবেশনে এসব কথা বলেন এফএওর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ উপালি বিক্রমাসিংহে। আলোচনা করেন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিবিদ নিহাল পিতিগালা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমলেও আঞ্চলিক ও দেশ পর্যায়ে দাম সেই হারে কমছে না। এর কারণ হিসেবে তাঁরা মূলত অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেন। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি—এসব কারণেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম কমার প্রভাব পড়ছে না। সেই সঙ্গে রপ্তানিকারী দেশগুলোর নীতিগত অবস্থানের প্রভাবও আছে, যেমন কিছু অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই তারা খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর করণীয় কী, এমন প্রশ্নের জবাবে উপালি বিক্রমাসিংহে বলেন, বাজার উন্মুক্ত রাখাই সেরা সমাধান। দেখা গেছে, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক সময় পরিস্থিতির অবনতি হয়। সে জন্য এই সময় আলোচনার মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আমদানিকারকদের আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো উচিত। এ ছাড়া কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকেরা অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগ্রহী হন না, এটা আমলে নেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।

এ ছাড়া এফএওর পক্ষ থেকে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত দেশগুলোকে এফএওর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান উপালি বিক্রমাসিংহে।

সংকটের সময় রীতিমতো অস্ত্রে পরিণত হয় খাদ্য—এই কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে খাদ্য রপ্তানিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যেমন ভারত বিশেষ কিছু জাতের চাল রপ্তানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এই বাস্তবতায় অনেক দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছে, যদিও তা মোটেও সহজ কাজ নয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নেপালি গবেষক পুষ্প শর্মা বলেন, নেপালের মতো দেশের পক্ষে এটা সম্ভব নয়, কারণ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে গেলে সার তো ঠিকই আমদানি করতে হবে। ফলে এই স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার নীতি সবার জন্য যথাযথ নয় বলে তিনি মত দেন।

এই পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদক অর্থাৎ কৃষকদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন উপালি বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আপৎকালীন সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে শুধু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ হয় না।