প্রস্তাবিত নতুন মজুরিকাঠামোর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। এবার গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে ৫টি করা হয়েছে।
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে পাঁচ বছর পর শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে গ্রেডভেদে ৫৪ থেকে ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে সর্বোচ্চ মজুরি বেড়েছে পঞ্চম গ্রেডে। এ গ্রেডেই পোশাকশিল্পের নিয়মিত শ্রমিকেরা ন্যূনতম মজুরি পেয়ে থাকেন। এর আগে যাঁরা শিক্ষানবিশ শ্রমিক হিসেবে পোশাক কারখানার কাজে যুক্ত হন, তাঁদের মজুরি আরও কম, সর্বসাকল্যে ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা।
পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি গ্রেডভিত্তিক প্রস্তাবিত মজুরি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে সর্বশেষ পোশাকশিল্পের মজুরিকাঠামো ঘোষিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার শ্রমিকদের জন্য মোট সাতটি গ্রেড বা শ্রেণিতে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ বছর গ্রেড কমিয়ে সাতটির জায়গায় পাঁচটি করা হয়েছে। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেডের সংখ্যা কমানো হয়েছে।
সরকারি গেজেট অনুযায়ী, এ বছর গ্রেডভেদে সর্বনিম্ন ৫৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। কোনো গ্রেডেই মোট মজুরি ১৫ হাজার টাকা অতিক্রম করেনি। যদিও পোশাকশ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। প্রস্তাবিত মজুরিকাঠামোয় ১ নম্বর গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের সর্বোচ্চ মোট মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা, গত বছর এই গ্রেডে মোট মজুরি ছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। সেই হিসাবে ৫ বছরের ব্যবধানে এই গ্রেডে মোট মজুরি
বেড়েছে ৫ হাজার ১৬০ টাকা। এটিই এখন শ্রমিকদের সর্বোচ্চ গ্রেড। এ গ্রেডে গতবারের তুলনায় নতুন মজুরিকাঠামোয় মজুরি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।
শ্রমিকদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থাৎ গ্রেড ২–এ মোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৮০০ টাকা, আর বাড়িভাড়া মূল মজুরির ৫০ শতাংশ হিসাবে ৩ হাজার ৯০০ টাকা, এর বাইরে চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভাতা বাবদ মিলবে ২ হাজার ৪৫০ টাকা। গতবার এই গ্রেডে মজুরি ছিল ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। সেই হিসাবে নতুন কাঠামোয় মজুরি বেড়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা বা প্রায় ৫৩ শতাংশ।
গ্রেড ৩–এ এ বছর মোট মজুরি বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এই গ্রেডে গতবার মোট মজুরি ছিল ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। সেই হিসাবে নতুন কাঠামোতে মজুরি বেড়েছে ৪ হাজার ৬৯৫ টাকা বা প্রায় ৫৩ শতাংশ।
গ্রেড ৪–এ মোট মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে ১৩ হাজার ২৫ টাকা। এই গ্রেডে গতবার মোট মজুরি ছিল ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। সেই হিসাবে এ বছর মজুরি বেড়েছে ৪ হাজার ৬২০ টাকা বা প্রায় ৫৫ শতাংশ।
সর্বশেষ গ্রেড ৫–এ এবার সব মিলিয়ে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গতবার এ মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা। সেই হিসাবে এ গ্রেডে মজুরি বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বা প্রায় ৫৬ শতাংশ। এটি শ্রমিকদের সর্বনিম্ন গ্রেড।
অন্যদিকে পোশাকশিল্পের কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮০০ টাকা। কর্মচারীদের জন্য গ্রেড রয়েছে চারটি। সর্বোচ্চ গ্রেডে মোট মজুরি ১৮ হাজার ৮০০ টাকা। আর শিক্ষানবিশ কর্মচারীর মজুরি হবে ৯ হাজার ৯৫০ টাকা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৪ দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত মজুরির ওপর লিখিতভাবে আপত্তি বা সুপারিশ করা যাবে মজুরি বোর্ডে। সেই আপত্তি ও সুপারিশের পর প্রস্তাবিত মজুরি চূড়ান্ত করা হবে। নতুন মজুরিকাঠামো ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।