মুরগির বাচ্চার দাম ঊর্ধ্বমুখী, ডিম ও মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে

বেশি দামে মুরগির বাচ্চা কিনলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। কয়েক সপ্তাহ পর এর প্রভাব পড়বে ডিম ও মুরগির দামে।

মুরগির বাচ্চা
ফাইল ছবি

বাজারে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় মুরগির বাচ্চা কম উৎপাদন হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে যা ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এদিকে সরকার আইন করে এক দিনের মুরগির বাচ্চার আমদানি বন্ধ করতে যাচ্ছে। ফলে এ বাজার গুটিকয়েক কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রান্তিক খামারিদের।

খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগে বাজারে একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির একটি বাচ্চার দাম ছিল ২৭ থেকে ৩৫ টাকা। এখন যা ৪৯ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিটি বাচ্চার দাম কমবেশি ২০ টাকা বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচে তা যোগ হবে। খামারিরা মুরগি বিক্রির সময় এই অতিরিক্ত দাম রেখে দিতে চাইবেন।

বাজারে যে শুধু ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে, তা-ই নয়, সাদা ও বাদামি রঙের লেয়ার; সাদা ও বাদামি রঙের কক; সোনালি ও কালার বার্ড (হাইব্রিড সোনালি) জাতের মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে।

ব্রয়লার মুরগি বাজারে বিক্রির উপযোগী হতে সাধারণত এক মাসের মতো সময় লাগে। উৎপাদনের অন্য কোনো খরচও কমেনি। ফলে মাসখানেকের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাটের খামারি মেজবাউল মারফি প্রথম আলোকে বলেন, মুরগির বাচ্চার দাম মাসখানেক আগেও কম ছিল। এখন প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে। তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই মুরগির দামও বাড়বে। বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসলে ছোট খামারিরা আবার মুরগি উৎপাদন বন্ধ করবে। তাতে সংকট আরও বাড়বে।

বাজারে যে শুধু ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে, তা-ই নয়, সাদা ও বাদামি রঙের লেয়ার; সাদা ও বাদামি রঙের কক; সোনালি ও কালার বার্ড (হাইব্রিড সোনালি) জাতের মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি মুরগির বাচ্চার দাম। এই জাতের প্রতিটি বাচ্চার দাম এক মাসে বেড়েছে ৩৬ টাকা। বাজারে এখন এক কেজি সোনালি মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। ডিম উৎপাদনের লেয়ার জাতের দুই ধরনের মুরগির প্রতিটি বাচ্চার দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা। তাতে ডিম উৎপাদনের খরচও বাড়বে।

অ্যাভোন পোলট্রির নির্বাহী সহসভাপতি ও ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হাসান উৎপাদন কম হওয়ার ফলে বাজারে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুরগির বাচ্চার উৎপাদন ও দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। চলতি সপ্তাহেও একটি সভা আছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত দাম কমে আসবে। কারণ, বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়ান। তাতে পোলট্রিশিল্পের ওপর প্রভাব পড়ে।’

দেশে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার উৎপাদন ও বিপণনের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে বেসরকারি খাত। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসের দিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক দিন বয়সী প্রতিটি মুরগির বাচ্চা বিক্রি করেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। বছরের মাঝামাঝি অবশ্য দামটা একটু কমেছিল। এখন আবার বাড়ছে। যদিও মুরগির খাবারসহ অন্যান্য খরচে বড় হেরফের হয়নি।

নরসিংদীর মুরগির বাচ্চার ব্যবসায়ী রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার তুলনায় বাচ্চা বাজারে কম আসছে। তাতে বাচ্চার দাম বাড়তির দিকে। লম্বা সময় ধরে বাচ্চার দাম এভাবে থাকলে বাজারে প্রভাব পড়বে।

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বলছে, দেশে সব মিলিয়ে প্রতি সপ্তাহে এক দিন বয়সী প্রায় দুই কোটি মুরগির বাচ্চার চাহিদা আছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০টি প্রতিষ্ঠান ১ কোটির বেশি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বাচ্চা এনে চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে।

এদিকে দেশে বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে, এমন বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে পালনের জন্য এক দিনের মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮-এ সংশোধনী আনা হচ্ছে।

মুরগির বাচ্চার উৎপাদন ও দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। চলতি সপ্তাহেও একটি সভা আছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত দাম কমে আসবে। কারণ, বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়ান। তাতে পোলট্রিশিল্পের ওপর প্রভাব পড়ে।
অ্যাভোন পোলট্রির নির্বাহী সহসভাপতি ও ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হাসান

দেশের বাজারে এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম সব সময়ই টালমাটাল থাকে। এক দিনের বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করা হলে এই খাত কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের হাতে আরও জিম্মি হতে পারে এবং এ খাতে বারবার অস্থিরতা দেখা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে মুরগির খাবার ও বাচ্চার দামে অস্থিরতার কারণে উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেকে বেড়েছে। বাচ্চার দাম মাঝে একটু কমায় মুরগির দামও কিছুটা কমেছিল। এখন আবার বাচ্চার দাম বাড়ছে। তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে প্রকারান্তরে মুরগির মাংসের দাম বাড়বে।