আকাশছোঁয়া দামের কারণে ঢাকায় নতুন অ্যাপার্টমেন্ট কেনা মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। সে কারণে অনেকেই পুরোনো বা ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট কেনার দিকে ঝুঁকছেন। তবে জমির উচ্চ মূল্যের পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বছর বছর বাড়ছে। তার প্রভাবে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী।
বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে মিরপুরে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ক্রেতাদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৫ জন মিরপুরে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজেছেন। গত বছরের একই সময়ে এই এলাকার পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা ছিল ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। মূলত মেট্রোরেল চালু হওয়ার কারণেই মিরপুরে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেড়েছে।
মিরপুরের পর উত্তরায় পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি। গত জানুয়ারি-মার্চ মাসে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ ক্রেতা উত্তরায় ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজেছেন। যদিও গত বছরের একই সময়ে উত্তরায় চাহিদা ছিল ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাও বেড়েছে। এই সময়ে প্রতি ১০০ জন ক্রেতার মধ্যে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজেছেন। গত বছরের প্রথম তিন মাসে এই চাহিদা ছিল ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অনলাইনে নতুন-পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক জায়গা বেচাকেনা ও ভাড়া দেওয়া-নেওয়ার প্ল্যাটফর্ম বিপ্রপার্টির এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত বিপ্রপার্টিতে যেসব ক্রেতা পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে খোঁজখবর নিয়েছেন, তাঁদের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
বিপ্রপার্টির জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর, উত্তরা ও বসুন্ধরার পর পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ক্রেতা ধানমন্ডি এবং ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ ক্রেতা মোহাম্মদপুরে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজেছেন। বনশ্রীর ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্টেরও চাহিদা কম নয়। গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পৌনে ৬ শতাংশ ক্রেতা এই এলাকায় পুরোনো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজেছেন।
জানতে চাইলে বিপ্রপার্টির মহাব্যবস্থাপক (প্রোডাক্ট অ্যান্ড গ্রোথ) খান তানজীল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্য, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও নতুন ড্যাপের নিয়মকানুন আবাসন খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, তাই ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট কেনা গ্রাহকদের কাছে স্বস্তিদায়ক বিকল্প হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্টের বাজার প্রায় ২৫ গুণ বড়। পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগের বড় সুবিধা হচ্ছে, গ্রাহকেরা তুলনামূলক কম দামে তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী সিঙ্গেল, ডুপ্লেক্স বা স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারছেন।
অবশ্য পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের দামও যে খুব কম, সেটি ভাবার অবকাশ নেই। বিপ্রপার্টির তথ্যানুযায়ী, ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি মিরপুরে। অন্যান্য এলাকার তুলনায় মিরপুরেই দাম সবচেয়ে কম। সেখানে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ৬ হাজার ২৬৭ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৬ হাজার ৬৭ টাকা। উত্তরায় দাম আরও বেশি। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে উত্তরায় প্রতি বর্গফুট পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের গড় দাম ছিল ৭ হাজার ১৩৫ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে চলতি বছর বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৯০৩ টাকায়।
এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি বর্গফুট বসুন্ধরায় ৯ হাজার ৩৯৫ টাকা, ধানমন্ডিতে ১৩ হাজার ৫৬৩ টাকা, মোহাম্মদপুরে ৭ হাজার ২৫৮, বনশ্রীতে ৭ হাজার ৪৫৯, বনানীতে ১৫ হাজার ১৯৪, রামপুরায় ৭ হাজার ৩, গুলশানে ১৫ হাজার ৪৮০ টাকা। এসব এলাকায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রতি বর্গফুটের দাম সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে।
বিপ্রপার্টির তথ্যানুযায়ী, ক্রেতাদের মধ্যে মাঝারি অর্থাৎ ১২০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুটের পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আদাবর, রামপুরা, উত্তরা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১৪০০-১৫০০ বর্গফুটের ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজেন ক্রেতারা। আবার বনানী, ধানমন্ডি ও গুলশানে ১৭০০-১৮০০ বর্গফুটের পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে বাড্ডা ও মোহাম্মদপুরে ১০৪৩-১১১৫ বর্গফুট এবং মিরপুরে ১২৫৪ বর্গফুটের ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি।
জমির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন ড্যাপে ভবন নির্মাণে উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে নতুন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় আবাসন প্রকল্পের সংখ্যাও কম। সে জন্য তুলনামূলক কম দামের পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রি বেড়েছে।আলমগীর শামসুল আলামিন, সভাপতি, রিহ্যাব
জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, জমির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন ড্যাপে ভবন নির্মাণে উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আরোপ এবং নির্মাণসামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে নতুন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় আবাসন প্রকল্পের সংখ্যাও কম। সে জন্য তুলনামূলক কম দামের পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রি বেড়েছে। ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কমানো হলে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পেতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।