তিন মাসে ১৯ ওষুধ কোম্পানির ৭,০৪০ কোটি টাকার ব্যবসা, কমেছে মুনাফা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বাড়লেও মুনাফা কমে গেছে। ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত ১৯ কোম্পানি মিলে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে এসব কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ব্যবসা করেছিল ৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বেড়েছে ৩০১ কোটি টাকার বা প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ।

ওষুধ বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলোর আয় তথা ব্যবসা বাড়লেও মুনাফা উল্টো কমে গেছে। সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের ১৯ কোম্পানি মিলে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সম্মিলিতভাবে মুনাফা করেছে ১ হাজার ১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সম্মিলিত এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত মুনাফা কমেছে ৫১ কোটি টাকা বা প্রায় ৫ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধির পরও মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ ওষুধের কাঁচামাল আমদানি খরচসহ ব্যবসার পরিচালন খরচ বেড়ে যাওয়া। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানি ও পরিচালন খরচ বেড়েছে। এ কারণে মুনাফা কমে গেছে।

আয়ে শীর্ষে যারা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র চারটি কোম্পানি গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই ও রেনাটা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আয় ছিল স্কয়ার ফার্মার। কোম্পানিটি তিন মাসে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৭১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বেক্সিমকো ফার্মা। আর এসিআই ব্যবসা করেছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকার। রেনাটা তিন মাসে আয় করেছে ১ হাজার ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আয়ের দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিল একমি ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটি গত জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ৮৩৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

একটি কোম্পানি নির্দিষ্ট একটি সময়ে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে যে আয় করে তা ওই কোম্পানির ব্যবসার আয়। এই আয় থেকে কোম্পানিটি কাঁচামাল আমদানি, পরিচালন ব্যয়, কর পরিশোধসহ সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তাই ওই সময়ের মুনাফা। তাই কোম্পানির আয় বেড়ে যাওয়া মানে মুনাফা বেশি তা নয়। আয় বৃদ্ধির চেয়ে খরচ বৃদ্ধির হার বেশি হলে সে ক্ষেত্রে মুনাফায় টান লাগে। এ কারণে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর আয় বাড়লেও মুনাফা কমে গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো হচ্ছে স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই, রেনাটা, ওরিয়ন ফার্মা, বীকন ফার্মা, ইবনে সিনা, একমি ল্যাবরেটরিজ, এসিআই ফরম্যুলেশন, অ্যাডভান্ট ফার্মা, এমবি ফার্মা, জেএমআই হসপিটাল, জেএমআই সিরিঞ্জ, নাভানা ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফার্মা এইডস, সিলভা ফার্মা, টেকনো ড্রাগস ও সিলকো ফার্মা। এসব কোম্পানির মধ্যে বেশির ভাগ কোম্পানি সরাসরি ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত। কয়েকটি কোম্পানি ওষুধ খাতের নানা সরঞ্জামের ব্যবসা করে।

মুনাফায় শীর্ষে যারা

শেয়ারবাজারের ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফায় শীর্ষে ছিল স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিটি এই তিন মাসে ৫৫২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। যদিও এই মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি টাকা কম। মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো ফার্মা। কোম্পানিটি গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১৬৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ কোটি টাকা বেশি। মুনাফায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল এসিআই। কোম্পানিটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৭৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ কোটি টাকা বেশি। মুনাফায় চতুর্থ অবস্থানে ছিল রেনাটা। কোম্পানিটি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৫৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫ কোটি টাকা কম। মুনাফার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিল একমি ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৫৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ কোটি টাকা কম।

খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসা যে হারে বেড়েছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত আয় বছর শেষে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ জাতীয় স্বাস্থ্য হিসাব (ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস) অনুযায়ী, চিকিৎসা বাবদ মানুষ যে অর্থ খরচ করে তার সিংহভাগই ব্যয় হয় ওষুধের পেছনে। চিকিৎসা বাবদ মানুষ নিজের পকেটের যে অর্থ খরচ করে, তার মধ্যে ১০ দশমিক ১ শতাংশ খরচ করে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, রোগনির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ওষুধে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং চিকিৎসাসামগ্রীতে খরচ করা হয় শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ চিকিৎসার অন্যান্য খাতে যে খরচ করা হয় তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ যায় শুধু ওষুধের পেছনে। এ কারণে দেশে ওষুধের ব্যবসাও বছর বছর বাড়ছে।