নাম ‘মিনি কোল্ড স্টোরেজ’। ধারণক্ষমতা ১০ টন। রাজশাহীর বাঘার আমচাষি শফিকুল ইসলাম তাতে ৯ টন আম রেখেছিলেন। এর মধ্যে শুরু হলো দেশে অস্থিরতা। আম বিক্রি করা যায়নি। ১৭ দিন পর গত বুধবার ওই হিমাগার থেকে আম বের করে দেখা গেল একটি আমের গায়েও কোনো স্পট নেই। সেই আম এখন ভালো দামে বিক্রিও করা যাচ্ছে।
শফিকুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কলিগ্রামে। উপজেলার পাকুড়িয়া বাজারে শফিকুল ইসলাম ও তাঁর ভাই আসাফ উদ দৌলার ‘সাদি এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাঘা উপজেলার বড় আম উৎপাদনকারী চাষি তাঁরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় শফিকুল ইসলামের জমিতে এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ বা ছোট হিমাগার স্থাপন করেছে। শফিকুল ইসলাম প্রথমবারের মতো ৬ জুলাই থেকে এই হিমাগারে আম্রপালি, লকনা, ফজলি, আড়াজাম জাতের ৯ টন আম সংরক্ষণ করেন। প্রকল্পটি চালুর আগে বলা হয়েছিল যেকোনো দুর্যোগে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত এই হিমাগারে আম সংরক্ষণ করা যাবে।
গত বুধবার বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হিমাগারে রাখা আম বের করে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। আমগুলো যেমন রাখা হয়েছিল, ঠিক তেমনই রয়েছে। এ সময় আসাফ উদ দৌলা বলেন, সাধারণত ফ্রিজে আম সংরক্ষণ করা হলে ওপরের খোসা জড়ো হয়ে যায়। কিন্তু হিমাগারে তা হয়নি।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় ছোট এই হিমাগারের পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি প্যাকেজিং হাউস। হিমাগার থেকে বের করা আম কত দিন ঠিক থাকে তা যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে এই প্যাকেজিং হাউসের মাধ্যমে। হিমাগারে রাখা শফিকুল ইসলামদের আম হিমাগার থেকে বের করে গত ১০ দিন এই প্যাকেজিং হাউসে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আম নষ্ট হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প থেকে প্যাকেজিং হাউসটি নির্মাণ করা হয়েছে। সাদি এন্টারপ্রাইজ ২০১৫ সাল থেকে আম রপ্তানি করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০০ টনের বেশি আম ইউরোপে রপ্তানি করেছে। এ বছর রপ্তানি করেছে চার টন আম।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, সাদি এন্টারপ্রাইজ রাজশাহীর একটি বড় আম উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। রপ্তানির সুবিধার্থে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাঁদের জমিতে এই হিমাগার তৈরি করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে হিমাগার প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক এস এম আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী বিভাগে ১১টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ বা ছোট হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঘার হিমাগারটিসহ তিনটির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আরেকটি হিমাগারে ২ টন আম, ১ টন আমসত্ত্ব ও ১৩ মণ আখের গুড় সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর পুঠিয়ার হিমাগারে গাজর ও টমেটো রাখা হয়েছে।
এম এম আমিনুজ্জামান জানান, এসব হিমাগারে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত আম বা অন্য শাকসবজি নিরাপদে সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতিটি হিমাগার তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। জমি দিয়েছেন চাষি।