নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ আয়সহ অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গড় আমদানি শুল্ক বেশি। বাংলাদেশে গড় শুল্কের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। যা শ্রীলঙ্কায় ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৮ শতাংশ।
এই উচ্চ শুল্ক রপ্তানির তুলনায় অভ্যন্তরীণ বাজারভিত্তিক শিল্পের জন্য আপেক্ষিকভাবে মুনাফা বাড়ায়, যা কিনা বিদেশি বাজারের জন্য উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে এটি রপ্তানি বহুমুখীকরণে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে।
পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার। গত বুধবার নিজেদের কার্যালয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।
জায়েদি সাত্তার বলেন, উচ্চ শুল্ক এখন সুরক্ষার প্রধান উপকরণ, যা কিনা আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কাজ করছে। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত প্রায় অধিকাংশ ভোগ্যপণ্য উচ্চ শুল্কের সুরক্ষা পায়। বেশির ভাগ আমদানি-বিকল্প শিল্পের জন্য সুরক্ষার কার্যকর হার ১০০ শতাংশ থেকে ৪০০ শতাংশ বা এরও বেশি হতে পারে।
রপ্তানিবিরোধী পক্ষপাত রপ্তানি বহুমুখীকরণে অন্যতম বাধা হিসেবে মন্তব্য করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের বাইরে ১ হাজার ৩৭৭টি পণ্য রপ্তানি করে। তার মধ্যে ১৭৪টি পণ্য অত্যন্ত প্রতিযোগিতাসক্ষম, ৪০৮টি মাঝারি প্রতিযোগিতাসক্ষম এবং ৭৯৫টি সামান্য প্রতিযোগিতাসক্ষম।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের বাইরে ৩৪৬ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বছরে ১০ লাখ ডলার আয় করে। যদিও সেগুলো বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা পায় না। এসব পণ্য রপ্তানিকারকেরা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা পেলে রপ্তানি খাত আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য বাড়াতে নগদ সহায়তার পাশাপাশি বন্ডেড ওয়্যারহাউসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, শুধু ট্যারিফ নীতি দিয়ে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে না।