মৌসুমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল মাঝারি ও বড় আকারের ৩০০টি চামড়া কিনেছেন। গড়ে দাম পড়েছে ৫৭০ টাকা। তাঁর প্রত্যাশা, লবণ ছাড়া এসব চামড়া ৬০০ থেকে ৬২০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকায় আজ সোমবার বেলা একটার দিকে মোহাম্মদ রুবেলের সঙ্গে দেখা হয়। চামড়া কেনার কাজে ব্যস্ত ছিলেন পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এই যুবক। এক ফাঁকে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, কেনা দামের চেয়ে ৫০ টাকা লাভে আড়তে বিক্রি করে দেবেন। সন্ধ্যার পর আড়তদারেরা এসে চামড়ার দরদাম করবেন। তখন বোঝা যাবে লাভ কেমন হলো।
নগরে প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশি চামড়া বিক্রি হয় নগরের চৌমুহনী এলাকায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া এসে স্তূপ হয় এখানে। আজ দুপুরে চৌমুহনী এলাকায় গিয়ে কথা হয় মো. সাইফুল আলম নামের এক চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি ঈদে চামড়ার ব্যবসা করছেন। এবার পাঁচ হাজার চামড়া কেনার পুঁজি নিয়ে নেমেছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত ৮০০টি চামড়া কিনেছেন। বড় আকারের গরুর চামড়া কিনেছেন গড়ে ৭০০ টাকায়। মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর চামড়ার দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আড়তদারের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। লোকসানে বিক্রি করতে হবে না বলে আড়তদারেরা আশ্বস্ত করেছেন। লবণ ছাড়া প্রতিটি বড় চামড়া ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি করবেন। আর লবণযুক্ত চামড়া এক হাজার টাকায়।
স্থানীয় এলাকার এক বাসিন্দার সঙ্গে দাম নিয়ে দরাদরি করছিলেন নুর হোসেন নামের আরেক মৌসুমি বিক্রেতা। তিনি দুপুর পর্যন্ত ২৮টি চামড়া কিনেছেন। নূর হোসেন জানান, তাঁর কেনা পড়েছে গড়ে ৪০০ টাকা। ৫০ টাকা লাভে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করবেন। এ ছাড়া আরও অন্তত ১০০টি চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া নিয়ে আসছেন মৌসুমি বিক্রেতা ও অলিগলির বাসিন্দারা। তারপর দরাদরি করে এসব চামড়া কিনে নিচ্ছেন তুলনামূলক বড় ব্যবসায়ীরা। এরপর স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এসব চামড়া পরে নিয়ে যাওয়া হবে আড়তে। চট্টগ্রাম নগরের প্রধান আড়তগুলো আতুরার ডিপো এলাকায়। বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া নিয়ে সেখানে বিক্রির জন্য আসেন ব্যবসায়ীরা। এই দুই স্থানে এবার প্রচুর চামড়া দেখা গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আড়তদারেরা পাড়াভিত্তিক বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
চামড়ার সরবরাহ ভালো এবার
বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় চার লাখ গরু-মহিষ কোরবানি হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ৫০ হাজারের বেশি ছাগল কোরবানি হয়। কিছু চামড়া উপজেলা পর্যায়ে লবণ দিয়ে রাখা হয়। তবে বেশির ভাগ চামড়া চলে আসে নগরের আতুরার ডিপোর আড়তে। এ ছাড়া গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশও কিছু চামড়া সংগ্রহ করে। সেই চামড়াগুলোও আড়তদারদের আড়তে চলে যায়। এ বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন আড়তদারেরা। চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ সংগ্রহের পাশাপাশি শ্রমিকও নিয়োগ করেছেন তাঁরা।
আড়তদারেরা বলছেন, ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। সরকার–নির্ধারিত দামেই চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে। চামড়ার সংকট নেই।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চামড়ার আড়তদার, লবণ মিলের মালিক, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আড়তদার সমিতির পক্ষ থেকে একটি ২০ ফুট আকৃতির কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ এবং ঢাকায় ট্যানারির মালিকদের কাছে পাঠানো পর্যন্ত ৪৯৮ টাকা খরচ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে লবণ, শ্রমিক, সংরক্ষণ, পরিবহন ইত্যাদি খরচ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে কাঁচা চামড়া কেনার খরচ।
জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ চার লাখ পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, চামড়ার সংকট নেই। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। লবণ ছাড়া প্রতিটি চামড়ায় ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’
এখনো বকেয়া ২০ কোটি টাকা
একসময় আতুরার ডিপো আড়তদার সমিতির অধীন ১১২ জন সদস্য ছিলেন; কিন্তু দীর্ঘদিনের লোকসান ও বকেয়া টাকা উদ্ধার করতে না পারার কারণে এখন তা ৩০ জনের নিচে নেমে এসেছে। অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এবার ২৫ থেকে ৩০ জন চামড়া সংরক্ষণ করছেন।
আড়তদারেরা জানান, ঢাকার ট্যানারির মালিকদের কাছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ বকেয়া টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। ২০২০ সাল থেকে নগদে বিক্রি করা হচ্ছে। আগের বকেয়া টাকা পেলে অনেক আড়তদার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতেন।
সমিতির সহসভাপতি আবদুল কাদের বলেন, চামড়া সংগ্রহ করার পর ট্যানারির মালিকেরা যাতে ন্যায্যমূল্যে কেনেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়তার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।