আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের ২০২৪-২৬ মেয়াদের নেতৃত্ব নির্বাচনে ১০ বছর পর ভোট হচ্ছে। এ জন্য বাণিজ্য সংগঠনটির সদস্যদের মধ্য থেকে ভোটার হয়েছেন ৪৭৬ জন। এই ভোটারদের প্রতি পাঁচজনের একজন সংগঠনটির নেতা হতে চান। ইতিমধ্যে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে ৯৭ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
অবশ্য এবারের নির্বাচনে শুধু মনোনয়ন নয়, প্যানেলের সংখ্যাতেও রেকর্ড হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারটি প্যানেল হতে পারে—এমন আভাস মিলছে। প্যানেলে লিডার হিসেবে রিহ্যাবের সাবেক নেতা ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়েছেন।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ২৯। তার মধ্যে ঢাকার ২৬টি পদের বিপরীতে ৯০ জন ও চট্টগ্রামের ৩টি পদের বিপরীতে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২১ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। ৩১ জানুয়ারি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন বোর্ড।
রিহ্যাবের এই নির্বাচন গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তখন নির্বাচন কমিশন গঠন ও ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে নির্বাচন স্থগিত হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয় সংগঠনের সব ব্যাংক হিসাবও। একই সঙ্গে নভেম্বরের শেষ দিকে রিহ্যাবের তৎকালীন কমিটি বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। তারপর নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছাদেক আহমেদ।
এবারের নির্বাচনে রিহ্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে ‘আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই প্যানেলের পক্ষে ৩৪ জন ব্যবসায়ী মনোনয়ন কিনেছেন। তাঁর মধ্যে ঢাকায় ৩০ এবং চট্টগ্রামে ৪ জন রয়েছেন।
আবাসন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের সঙ্গে আছেন রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর নিজেদের নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন রিহ্যাবের সদস্যরা। এই নির্বাচনে আমাদের প্যানেল বিজয়ী হলে সদস্যদের মর্যাদা ফেরানোর পাশাপাশি আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব।
এদিকে সেঞ্চুরি রিয়্যালটির চেয়ারম্যান ও এমডি এম জি আর নাসির মজুমদার নেতৃত্বে ডেভেলপারস ফোরাম নামে একটি প্যানেল হয়েছে। এই প্যানেলের পক্ষে ৩২ জন ব্যবসায়ী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এম জি আর নাসির মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ বছরে আবাসন খাত তলানিতে চলে গেছে। দেড় হাজার সদস্যের রিহ্যাবে এখন ভোটার পৌনে পাঁচ শ। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আবাসন খাতের এই অবস্থা হয়েছে। তাই নেতা নির্বাচনে সদস্যরা ভোট চান।
এ ছাড়া রিহ্যাবের সাবেক সহসভাপতি ও বিশ্বাস বিল্ডার্সের এমডি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নবজাগরণ নামের আরেকটি প্যানেল হচ্ছে। প্যানেলটির পক্ষে ২৯ জন ব্যবসায়ী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এই প্যানেলে আছেন লুমিনাস হাউজিং লিমিটেডের এমডি এন এম নূর কুতুবুল আলম। তিনি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা নেই এমন কাউকে আমরা প্রার্থী করব না। কারণ, আমরা একটি পরিবর্তন চাচ্ছি। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চেয়ারে বসলেই আবাসন খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারবে।
এই তিনটি প্যানেলের বাইরে রিহ্যাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা ইন্তেখাবুল হামিদের নেতৃত্ব আরেকটি প্যানেল হচ্ছে। এই প্যানেলের পক্ষে সাবেক কয়েকজন পরিচালক মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই প্যানেলের সমর্থনে রয়েছেন রিহ্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।
জানতে চাইলে ইন্তেখাবুল হামিদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্যানেলে নাম ও প্যানেলের প্রার্থী কারা সেটি দু–এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। এ বিষয়ে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আমাদের প্যানেলে অনেকেই আসতে চাচ্ছেন। শিগগিরই আমরা সেটি চূড়ান্ত করব।
রিহ্যাবে একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হতো। ২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই সভাপতি পদে আসেন আলমগীর শামসুল আলামিন। পরের তিন মেয়াদেও সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি হয়েছে এই সংগঠনে। সব মিলিয়ে ১০ বছর পর ভোট হতে যাওয়ায় সাধারণ সদস্যদের মাঝে এই নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। যদিও গত বছর স্থগিত হওয়া নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮৫০। এবার তা কমে ৪৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ভোটার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রিহ্যাবের একাধিক সাবেক নেতা জানান, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কোনো ছাড় না দেননি। তাই ভোটার কমেছে।