একক পণ্য হিসেবে দেশে বিলিয়ন ডলার বা শতকোটি ডলার খরচ করে আনা আমদানি পণ্য ১৩টিতে উন্নীত হয়েছে। মূলত বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় এবং কোনোটির আমদানি বাড়ায় গত অর্থবছরে বিলিয়ন ডলার ক্লাবে পণ্যের সংখ্যা বেড়েছে।
বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশই শিল্পের কাঁচামাল। এসব কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি পণ্যের বড় অংশই দেশে বাজারজাত হচ্ছে। আর কিছু পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে।
এক বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিলিয়ন ডলার খরচ করে আনা পণ্যের সংখ্যা ছিল ১০। এক বছর আগের সেই তালিকা থেকে ছিটকে পড়েছে এলএনজি বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস। মূলত আমদানি কম হওয়ায় তালিকা থেকে ছিটকে গেছে এই পণ্য। তার বিপরীতে নতুন চারটি পণ্য যুক্ত হয়েছে এবারের তালিকায়। এই চারটি পণ্য হলো অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট সার, এলপিজি ও অপরিশোধিত চিনি। তালিকায় যুক্ত হওয়া চারটি পণ্যের সব কটির আমদানিমূল্য বেড়েছে। আর আমদানি বেড়েছে তিনটির।
এ ছাড়া এক বছর আগে তালিকায় থাকা বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা, রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা ও পুরোনো জাহাজ, প্রাণিখাদ্য ও সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামাল গম ও পাম তেল, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, জ্বালানি পণ্য ফার্নেস তেল ও ডিজেল এবারও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।
এই ১৩টি পণ্যের মধ্যে ৬টির আমদানিকারক প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয় ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করে গ্রামীণ অর্থনীতি বড় হচ্ছে। শহরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বড় হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে জীবনযাপনের প্রায় সব ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণ করতে উৎপাদনমুখী খাতও বড় হচ্ছে। মূলত এ কারণেই পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলে সামনে বিলিয়ন ডলারের আমদানির তালিকায় আরও নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, একক পণ্য হিসেবে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তুলা আমদানি হয়েছে ৪৪০ কোটি ডলারের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় কারখানায় রড তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা। এই পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ২৭২ কোটি ডলার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ফার্নেস তেল আমদানিতে ২২০ কোটি ডলার এবং গম আমদানিতে ২১৩ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। বাকি নয়টি পণ্যের আমদানি খরচ ২০০ কোটি ডলার নিচে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছরে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে কাপড়, মূলধনি যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক, টেক্সটাইলসহ কয়েকটি খাতে শতকোটি ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে, যেগুলোতে একক পণ্য হিসেবে আমদানি ব্যয় শতকোটি ডলার ছাড়ায়নি।