২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানার নির্মাণকাজ শেষ হলে সেখানে ৩৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এখন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বর্তমানে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
করোনা মহামারির কারণে অনেক দিন ধরে ঝুলে ছিল বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রস্তাব। গত সপ্তাহে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর জন্য ৩৬৪ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ১৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৩.৬১ টাকা করে)।
২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানার নির্মাণকাজ শেষ হলে সেখানে ৩৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বেজার তথ্যে জানা যায়, সরকার এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। ৩০ হাজার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ শিল্পনগরে নতুন করে দেশি–বিদেশি ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন ছয়টি এবং কক্সবাজারের সাবরাং পর্যটনকেন্দ্রে সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন বেজা ২৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাদা করে জমি ইজারার চুক্তি করবে।
‘আমাদের পণ্য’ স্লোগান নিয়ে বাজারে আসা ওয়ালটন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১০০ একর জমি পেয়েছে। তারা সেখানে মুঠোফোন, ফ্রিজ, টিভি, এসি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, লিফট ও এলইডি বাতি উৎপাদন করবে। এ ছাড়া তারা গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ইলেকট্রিক ও রাসায়নিক পণ্যসামগ্রী তৈরি করবে সেখানে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা রয়েছে তাদের।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা পাঁচটি ইলেকট্রনিক কোম্পানি হওয়ার জন্য কাজ করছে ওয়ালটন। সে স্বপ্ন পূরণের প্রাথমিক দ্বার উন্মোচিত হলো বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি পাওয়ার মধ্য দিয়ে। সেখানে উৎপাদিত পণ্য দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ২৫ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি বিআরবি গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি সেখানে প্লেট, গ্লাস, জগসহ কাচের পণ্য উৎপাদন করবে। কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজবার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বন্দরের কাছে, যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো। বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য উৎপাদন করা হবে।
প্রাথমিকভাবে কারখানা নির্মাণে ৪২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে; আর ১৮ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি পাওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভারতের আরএসপিএল হেলথ, ইশরাক স্পিনিং ও বিএসআরএম।
এদিকে কক্সবাজারের সাবরাং টু৵রিজম পার্কে সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। সেখানে হোটেল ও টু৵রিজম খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আছে ইফাদ ও ডার্ড গ্রুপ।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয়টি বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আকিজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও ওয়ালটন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফারভেন্ট মাল্টি বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আকিজ গ্রুপ সেখানে ২৫ একর জমি পেয়েছে। তারা সেখানে প্রাথমিকভাবে ৭৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। সিয়াম ফেব্রিকস জমি পেয়েছে পাঁচ একর। এলিট পেইন্টস জমি পেয়েছে ছয় একর। ওয়ালটন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফারভেন্ট মাল্টিবোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জমি পেয়েছে ৬০ একর।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে এত বড় বিনিয়োগ আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওয়ালটনের মতো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠানও বিনিয়োগ করছে। এর মাধ্যমে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে এই বার্তা যাবে যে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের পরিবেশ আছে।’
বেজার কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আসবে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে, পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে।
বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বর্তমানে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
এ ছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেপ্রায় ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হওয়ার আশা করছে সরকার।