রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা
রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা

শ্রমিকদের বেতন দিতে সহায়তা চায় তৈরি পোশাক ও বস্ত্রকল-মালিকেরা

দেশের চলমান সংকটে শ্রমিকদের বেতন এবং গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ও বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। এ ছাড়া তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় ছয় মাস স্থগিতেরও দাবি জানিয়েছে। যদিও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়নি।

বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতারা শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল দিতে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদে এক বছর মেয়াদি ঋণ দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই ঋণ পেলে তাঁদের পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যত্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কাও করেছেন তাঁরা।

বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, গভর্নরসহ কয়েকটি দপ্তরে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে গত ২৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রীসহ ৯টি দপ্তরে সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান।

বিকেএমইএর চিঠিতে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহের অরাজক পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানো যাবে না। লিড টাইম অনুযায়ী পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারা, বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, কারখানার উৎপাদন হ্রাস, শ্রমিকের অনুপস্থিতি, সরবরাহব্যবস্থায় কাঁচামাল না পাওয়ার কারণে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা ভয়াবহ কঠিন সময় পার করছেন। এরই মধ্যে উদ্যোক্তাদের ওপর গত মাসে বেতন পরিশোধের চাপ চলে এসেছে। ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ না পেলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যত্যয় ঘটতে পারে। যার ফলে ভিন্ন একটি বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, গত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৫ শতাংশ কম হয়েছে। এটা অনেক বড় প্রভাব। ফলে বড় কারখানাগুলো কোনোরকমে বেতন-ভাতা দিতে না পারলেও ছোট ও মাঝারি কারখানা পারবে না।’

অন্যদিকে বিটিএমএর চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে বস্ত্রকলগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প সুদে ঋণ না পেলে বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যত্যয় ঘটতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহায়তার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক মনোভাব পাওয়ার পরই মূলত বিটিএমএ ও বিকেএমইএ এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত আদৌ সহায়তা মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পোশাক ও বস্ত্রকলমালিকদের।

সহায়তা না চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সব উদ্যোক্তাই কমবেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে অনেকেরই জন্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে মানবিক হতে হবে।

করোনাকালে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প। এই খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ যেমন বেশি পেয়েছেন, তেমনি তাঁদের সুদও দিতে হয়েছে নামমাত্র। তিন দফায় সরকারের দেওয়া মোট ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণসুবিধার ৮০ শতাংশের বেশি পায় তৈরি পোশাকশিল্প।