কনটেইনার ব্যবস্থাপনা

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম ডিপো আংশিক চালু

বিস্ফোরণের আড়াই মাস পর খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও পরিবহনের কাজ শুরু করেছে বিএম ডিপো।

আড়াই মাস আগে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেডের আংশিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম কাস্টমস দুটি শর্তে অনুমতি দেওয়ার পর কার্যক্রম শুরু করে ডিপো কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে শুধু খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণের অনুমতি দিয়েছে কাস্টমস।

গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক। ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দুর্ঘটনায় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার এবং আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দুর্ঘটনার পর এ মাসে ডিপো কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণের অনুমতি দেয় কাস্টমস। অনুমতিপত্রে দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এই শর্তের একটি হলো পরিবেশ অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ১৫ দিনের মধ্যে নিতে হবে। আরেকটি হলো ১৫ দিনের মধ্যে কাছাকাছি কোনো অগ্নিনির্বাপণ কার্যালয় বা ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে।

শর্ত সাপেক্ষে শুধু খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর অনুমতির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নুর উদ্দিন মিলন, উপকমিশনার, চট্টগ্রাম কাস্টমস

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. নুর উদ্দিন মিলন এ অনুমতিপত্রে সই করেন। খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি পাওয়ার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর অনুমোদনের জন্য কাস্টমসের কাছে আবেদন করেছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার নুর উদ্দিন মিলন প্রথম আলোকে বলেন, বিএম ডিপোকে শর্ত সাপেক্ষে শুধু খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানো ও সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর অনুমতির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত ২২ আগস্ট অনুমতি পাওয়ার পর প্রতিদিন বন্দর ও কারখানা চত্বর থেকে খালি কনটেইনার ডিপোতে নিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবার ডিপো থেকে খালি কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির তথ্য অনুযায়ী, কার্যক্রম শুরুর পর সোমবার পর্যন্ত বিএম ডিপোতে ১ হাজার ৩৭৩ একক খালি কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিএম ডিপো চালু হয়। এই ডিপোর চেয়ারম্যান নেদারল্যান্ডসের নাগরিক রবার্ট প্রঙ্ক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হিসেবে আছেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি পাওয়া চট্টগ্রামের ২০টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে একটি হলো বিএম ডিপো। এই ডিপোতে মোট আমদানি–রপ্তানি পণ্যের ৮ শতাংশ ব্যবস্থাপনা হতো। দুর্ঘটনার পর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাপ পড়ে অন্য ডিপোর ওপর।

কনটেইনার ডিপোগুলোর মূল কাজ রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রপ্তানি পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর ছাউনিতে। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় এসব ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক–চতুর্থাংশও বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। এর বাইরে খালি কনটেইনার সংরক্ষণ করাও ডিপোর কাজ।

এখনো আটকে আছে ১৩০ কনটেইনার

দুর্ঘটনার পর রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪ কনটেইনার ও আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ডিপোতে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ৩৯৮টি ও আমদানি পণ্যবাহী ৪১৬টি কনটেইনার অক্ষত ছিল।

দুর্ঘটনার এক মাস পর আটকে থাকা পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। একইভাবে আটকে থাকা আমদানি পণ্য খালাস নিতে শুরু করেন আমদানিকারকেরা। আমদানি–রপ্তানিকারকেরা কাস্টমসে আবেদন করায় তাদের পণ্য খালাস বা রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়।

গতকাল সোমবারের হিসাবে দেখা গেছে, এখনো ডিপোতে আটকা আছে ১৩০ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য। আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার রয়েছে একটি। আটকে থাকা রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য আবেদন না করায় এগুলো ছাড় করা হয়নি।

কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের কাজ চলছে

দুর্ঘটনার পর বন্দরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিএম ডিপোতে বিপজ্জনক পণ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির বিষয়টি ওঠে আসে। এরপরই ডিপো কর্তৃপক্ষ ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা) স্থাপনের কাজ শুরু করে। দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত সিসিটিভি স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা সরিয়ে পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। আবার নতুন করে ডিপোর ভেতর স্থাপনা নির্মাণের কাজও চলছে।

জানতে চাইলে বিএম ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আখতার খান প্রথম আলোকে বলেন, ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম সংরক্ষণ করা হয়েছে। আড়াই হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রিজার্ভার ট্যাংকসহ ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের কাজ চলছে। এখনই আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর সক্ষমতা রয়েছে ডিপোর।