তৈরি পোশাকশিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পরদিনই গাজীপুরের শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। বুধবার সাভারের আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, যদি কোনো কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না বের হয়ে যান, তাহলে মালিকেরা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অর্থাৎ ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষণা করার পর বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনেরা ধমর্ঘট করছেন, কারখানা ভাঙচুর করছেন, যা অনভিপ্রেত।’
শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘এমন কিছু করবেন না যাতে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, ক্রেতারা এই শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘আশা করছি, বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকেরা নিয়ম মেনে কারখানায় কাজ করবেন।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আনন্দের বিষয় হলো, ‘সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গতকাল ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করেছে। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, মজুরি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। অনেক উদ্যোক্তার জন্যই এই মজুরি দেওয়া কঠিন হবে। আমরা গত ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সরকার নতুন যে মজুরিকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা সেটিই মেনে নেব, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। আমরা ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, এই মজুরি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
নিম্নতম মজুরি বোর্ডে গত মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকদের মজুরির বিষয়ে মালিকপক্ষের দেওয়া নতুন প্রস্তাবই চূড়ান্ত হয়। বোর্ডে এক ঘণ্টার বৈঠকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিও তা মেনে নেন। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের এই খাতে বর্তমানে নিম্নতম মজুরি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। ১ ডিসেম্বর থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকার নতুন মজুরি কার্যকর হবে। জানুয়ারি মাসে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাবেন শ্রমিকেরা।
চূড়ান্ত হওয়া মজুরি প্রস্তাব অনুযায়ী, মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। আর মূল বেতনের অর্ধেক হচ্ছে বাড়িভাড়া। এ ছাড়া খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ ও যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা। প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে। নতুন মজুরি কাঠামোতে সাতটি গ্রেডের বদলে পাঁচটি গ্রেড থাকবে।