পর্যটক টানতে কক্সবাজারে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য ছাড়
পর্যটক টানতে কক্সবাজারে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য ছাড়

পর্যটক টানতে কক্সবাজারে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য ছাড়

মঙ্গলবার বেলা দেড়টা। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট। সেখানে সাজানো ৫০টির বেশি স্পিডবোট। প্রতিটি দ্রুতগতির এই জলযানের সামনে ছিল বাঁধা লাল–সবুজের পতাকা। আর তাতে উঠে বসেছেন পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকেরাও। হুইসেল বাজতেই স্পিডবোটের বহর সারিবদ্ধভাবে ছুটে চলল। বঙ্গোপসাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ১২-১৫ মিনিটের মধ্যে সেই বহর পৌঁছাল মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির জেটিতে। সবুজ প্যারাবনে ঘেরা এই জেটি সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বিশেষ এই আয়োজন করা হয়। মহেশখালীতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল প্রমুখ। বিকেলে আবার মহেশখালী থেকে কক্সবাজার শহরে ফিরে আসে স্পিডবোটের বহর। অবশ্য সকালে পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে পর্যটকসহ হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে হয় শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে এই শোভাযাত্রায় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, জাফর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আরেকটি বিশেষ শোভাযাত্রা বের করে। এতে নেতৃত্বে দেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিললুর রহমান।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এ জন্য শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতভ্রমণে পর্যটকদের উৎসাহিত করতে হোটেলের কক্ষভাড়া, রেস্তোরাঁয় খাবারদাবারসহ নানা ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ মূল্য ছাড়। উৎসবের মূল আয়োজন লাবণী পয়েন্টে। সেখানে ২০০ স্ট্রলে বাহারি পণ্য নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে চলবে পর্যটনবিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, ঘুড়ি উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানগেম, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক উৎসব, ফানুস উৎসব, বালু ভাস্কর্য, বিচ ভলিবল, ক্রিকেট, ম্যাজিক শো, আতশবাজি, ডিজে শো ও কনসার্ট। বিদেশি পর্যটকদের অংশগ্রহণে থাকছে বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে উৎসব।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা সাত দিন হোটেল-রেস্তোরাঁতে পযটকদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। হোটেলের কক্ষভাড়ার ক্ষেত্রে ৩০-৭০ শতাংশ ও রেস্তোরাঁয় খাবারে ২০-৩০ শতাংশ মূল্য ছাড় পাচ্ছেন পর্যটকেরা।

কুমিল্লা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক ইকবাল বাহারের সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে খান খান হয়ে গেছে সমুদ্রসৈকত। সেখানে হাঁটাচলার পরিবেশ নেই। গোসল করাও নিরাপদ নয়। সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক ফিরে যাচ্ছেন।

জাহাজমালিকদের সংগঠন সি-ক্রুজ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, ৭ অক্টোবর থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে। তবে টেকনাফ থেকে নৌপথে সেন্ট মার্টিন যাতায়াতের জাহাজ চলাচল শুরু করতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
হোটেলমালিকেরা জানালেন, বর্তমানে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল–গেস্টহাউসে ৪৫ হাজারের মতো পর্যটক অবস্থান করছেন। আগামীকাল থেকে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।