পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ
পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

পোশাকশ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের প্রচারণা

দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৪০ হাজার শ্রমিক এখনো গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে আছেন। এ বাস্তবতায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চলমান ৩৬টি মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্তর্জাতিক প্রচারণা শুরু করেছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন।

গত বছর তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে আজ এই আন্তর্জাতিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।

এক বছর আগে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের পর এখনো শ্রমিকেরা গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঝুঁকিতে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে সংগঠনটির অভিযোগ।

ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের অন্যতম মুখ্য সংগঠক অ্যান বিয়েনিয়াস আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা সংগঠনগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অজ্ঞাতনামা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, তার কারণে যেন পোশাকশ্রমিক ও নেতাদের ভয়ভীতি দেখানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে এইচঅ্যান্ডএম ও জারার মতো ব্র্যান্ডগুলোর ভূমিকা আছে। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে যে মজুরি বৃদ্ধির দাবি করেছেন, সেই দাবিতে সমর্থন না জানিয়ে বা এসব মামলা প্রত্যাহারে তাঁরা চাপ না দেওয়ায় এটা স্পষ্ট, বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে কারা লাভবান হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ব্র্যান্ডগুলো এ পরিস্থিতির কারণে লাভবান হচ্ছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সব সময় শ্রমিকেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ বাস্তবতায় শ্রমিকদের শোভন মজুরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব মামলা প্রত্যাহার প্রথম পদক্ষেপ। শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই ভয়ের পরিবেশে থাকব না। আমরা জীবনধারণের উপযোগী মজুরি নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছি, যে মজুরি দিয়ে শ্রমিকেরা পরিবারসহ জীবন যাপন করতে পারবেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক বিবেচনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা। এ লক্ষ্যে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সহায়তা চেয়েছে।

শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এই ৩৬টি মামলা যারা করেছে, তাদের কাছ থেকে পোশাক কেনে—এমন ৪৫টি ফ্যাশন ব্র্যান্ড চিহ্নিত করেছে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন। তারা ব্র্যান্ডগুলোকে এসব মামলা প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষ্যে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডগুলো প্রাথমিকভাবে কিছু ব্যবস্থা নিলেও পরবর্তীকালে তারা আর বিষয়টি নিয়ে লেগে থাকেনি। পরিণামে এখন পর্যন্ত একটি মামলাও প্রত্যাহার হয়নি।

২০২৩ সালে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে পুলিশ গুলি করলে চারজন শ্রমিক মারা যান এবং কয়েক হাজার শ্রমিক আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় ১৩১ জনকে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় শ্রমিকনেতার উদ্বেগ, যেকোনো শ্রমিককে এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হতে পারে।