বিকল্প জ্বালানি হিসেবে শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর (বীর বিক্রম) সভাপতিত্বে বৈঠক হয়েছে। সভায় এলপিজি ব্যবহারের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
কার্য বিবরণী থেকে জানা যায়, সভায় শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা; এলপিজি ব্যবহারের কারিগরি ও বাণিজ্যিক দিকের সঙ্গে অন্যান্য জ্বালানির তুলনা; এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রণোদনা চিহ্নিত করা ও প্রথম ও তৃতীয় অ্যাজেন্ডার আলোকে শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহারের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বিষয়গুলো পর্যালোচনা ও চিহ্নিত করার লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিবকে কমিটি গঠন এবং সেই কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের প্রধান নির্বাহীসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ‘এলপিজি: বাংলাদেশের শিল্পের জন্য বিকল্প জ্বালানি সমাধান’ শীর্ষক প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি।
উপস্থাপনার পর হা-মীম গ্রুপের পক্ষ থেকে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের সামগ্রিক অবস্থা এবং বিকল্প হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি ব্যবহারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা এখনো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বলে এলপিজিভিত্তিক জেনারেটর ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত ব্যক্ত করা হয়।
হা-মীম গ্রুপ জানায়, বিদেশি ক্রেতারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে শিল্পকারখানাগুলো চাইলেও সব বয়লার ও ড্রায়ার এলপিজি দিয়ে চালাতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে কিছু যন্ত্র সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে চালানো যেতে পারে এবং অবশিষ্ট যন্ত্রপাতি প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলপিজির সাহায্যে যৌথভাবে চালানো যেতে পারে বলে তারা মত দেয়।
এই উপস্থাপনার পর উন্মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব হয়। সেখানে বিভিন্ন শিল্পমালিক এলপিজি ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ নেই, তাই এসব এলাকায় শিল্প খাতে এলপিজি ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বেঙ্গল গ্রুপের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, তাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারের কাছে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ পেশ করেছিলেন এবং সেভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও এখনো বিভিন্ন শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব শিল্পকারখানায় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়। বিকেএমইএর সভাপতি উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জের অনেক শিল্পকারখানা বেশ কিছুদিন যাবৎ গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে না। এর জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি এফএসআরইউ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় এমন সমস্যা হচ্ছে, দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।
সভায় শিল্প খাতে চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করা হয়। এলপিজি আমদানিপূর্বক বিতরণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন উপযোগী ভূমি বা জায়গার অভাব, নদীর নাব্যতা, কর অবকাঠামো, বাজার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সভায় বলা হয়, এ ছাড়া বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে। জ্বালানি তেলের সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাত জড়িত থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ, ক্রেতাদের চাপসহ বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের মনোবল রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার; ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেওয়া হয় যে সরকার তাদের পাশে আছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের জ্বালানি খাতে যে প্রভাব পড়েছে, তা নিরসনে এলপিজির ব্যবহার বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।