দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোয় (ইপিজেড) চীনা বিনিয়োগকারীরা এ পর্যন্ত ১০৭টি শিল্পকারখানা স্থাপন করেছে। এসব কারখানা স্থাপনে তারা মোট বিনিয়োগ করেছে ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার। আর কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের।
ইপিজেডগুলোয় চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এরই অংশ হিসেবে আজ সোমবার চীনের নিংবো শহরে একটি বিনিয়োগ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বেপজা ও নিংবো ডাস্যিঁয়ে চেম্বার অব কমার্স যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে।
বেপজা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান অনুষ্ঠানে বলেন যে চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে সে দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও গতিশীল অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর ফলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়।
আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের মূল আকর্ষণ হলো সস্তা ও সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য শ্রমশক্তি। এখানে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতিগুলো ক্রমাগত উদার করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেপজায় এক দরজায় সেবার (ওএসএস) মাধ্যমে ইপিজেডগুলোয় বিনিয়োগকারীদের জন্য শিল্প স্থাপন ও সেগুলো পরিচালনা সহজ করা হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এসব সুবিধা নিয়ে তাঁদের ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ চলমান। সেখানে ইতিমধ্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ছাড়া যশোর, পটুয়াখালী ও গাইবান্ধা জেলায় তিনটি নতুন ইপিজেড স্থাপনের কাজ চলছে, যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
সেমিনারে নিংবো ডাস্যিঁয়ে চেম্বার অব কমার্সের নির্বাহী পরিচালক চাও চুইং চীন বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশে প্রথাগত শিল্প, যেমন পাট ও চামড়া থেকে শুরু করে নতুন ক্ষেত্র যেমন ডিজিটাল অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষায় দুই দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হচ্ছে।
নিংবো ডাস্যিঁয়ে চেম্বারের মহাসচিব চাও মু জি তাঁর দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধাগুলো খুঁজে দেখার অনুরোধ জানান।
সেমিনারে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী ছাড়াও স্থানীয় গণমাধ্যম, বিনিয়োগ বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী আইনজীবীসহ প্রায় ১২০ জন উপস্থিত ছিলেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় তারা বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্যিক শহরগুলোর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ব্যবসা প্রধান শহরগুলোতে বাংলাদেশের কনস্যুলার সেবা চালুর অনুরোধ জানান। এ ছাড়া কাস্টমস আইন ও বিধিসমূহ আরও ব্যবসাবান্ধব করা এবং ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন তারা।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বেপজার নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তারেক হোসেন ও আলী ইসতিয়াক চৌধুরী।