কম্পিউটার, ল্যাপটপের ব্যবসা

বেড়েছে দাম, কমেছে আমদানি ও বিক্রি

গত তিন-চার মাসে দেশে কম্পিউটার আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। আর দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও দেশে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে প্রযুক্তিপণ্যের আমদানি ব্যয়ও। এ ছাড়া বাজেটে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ প্রযুক্তিপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

আবার নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। ফলে বাজারে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ প্রায় সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্যের বিক্রি ও আমদানি কমেছে।

কম্পিউটার আমদানিকারক, পরিবেশক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার।

করোনার মধ্যে অন্য অনেক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই খাতের বেচাকেনা ভালোই ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অস্থিরতায় গত তিন-চার মাসে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। আর বাজারে আমদানি করা কম্পিউটার, ল্যাপটপের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। দাম বাড়ায় ল্যাপটপসহ বিভিন্ন উপকরণের বিক্রি কমেছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

আমদানিকারক ও বিক্রেতারা বলছেন, গত তিন মাসে ল্যাপটপের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, কম্পিউটারের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেড়েছে। আর প্রিন্টারের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া কিবোর্ড, মাউস, হেডফোন, সিসি ও ওয়েব ক্যামেরা, পেনড্রাইভ ইত্যাদি উপকরণের দামও বেড়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে ১৫৬টি কম্পিউটার ও ল্যাপটপের দোকান রয়েছে। গত তিন মাসে এই কম্পিউটার মার্কেটে প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বিসিএস কম্পিউটার সিটির রিশিত কম্পিউটার্সের বিক্রয় ব্যবস্থাপক লুৎফুল্লাহিল মারুফ জানান, আসুস ব্র্যান্ডের জেন বুক সিরিজের যে ল্যাপটপ জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২১ হাজার টাকায়। এইচপি ব্র্যান্ডের ৭২ হাজার টাকার কোরআই ফাইভ মডেলের ল্যাপটপ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকায়।

এভাবে ডেল, লেনেভোসহ সব ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের দাম ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া ডেস্কটপ কম্পিউটারের দাম ২ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। ইপসন ব্র্যান্ডের ১৪ হাজার টাকা দামের প্রিন্টার এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯ হাজার টাকায়। এ ছাড়া অন্যান্য উপকরণের দাম ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

দাম বেড়ে যাওয়ায় ল্যাপটপের বিক্রি কমলেও ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি খরচ এড়াতে অনেকেই এখন ল্যাপটপের পরিবর্তে একই মানের ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনছেন।

তবে দাম খুব বেশি না বাড়লেও বিক্রি কমেছে দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের ল্যাপটপেরও। ওয়ালটনের বিসিএস কম্পিউটার সিটির বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা অন্য ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় অন্তত ৮-১০ হাজার টাকা কম দামে ল্যাপটপ বিক্রি করছি। তারপরও বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বিক্রি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে।’

এদিকে আমদানি করা নতুন ল্যাপটপের দাম বাড়ায় বাজারে নকল ও ব্যবহৃত ল্যাপটপের আমদানি ও বিক্রি বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া কম্পিউটারের বিভিন্ন নকল উপকরণও আসল বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকেরা প্রতারিত হচ্ছেন।