টানা ১৪ বছর পর নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতির পর ছাড়লেন এ কে এম সেলিম ওসমান। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করে সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন সদ্য সাবেক এই সংসদ সদস্য। সংগঠনটিতে নতুন সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম, যিনি এত দিন নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
বিকেএমইএর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ রোববার সংগঠনটির শীর্ষ পদে রদবদলের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিকেএমইএর ঢাকা কার্যালয়ে আজ সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এ কে এম সেলিম ওসমান সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, যা পর্ষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পর্ষদ সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বিদায়ী সভাপতি সেলিম ওসমান বক্তব্যও দেন।
বিকেএমইএর নতুন পরিচালনা পর্ষদে সহসভাপতি থেকে নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ফজলে শামীম এহসান। এ ছাড়া পরিচালক থেকে সহসভাপতি হয়েছেন মো. শামসুজ্জামান। নবগঠিত পর্ষদে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে আছেন মনসুর আহমেদ। সহসভাপতি পদে আরও আছেন অমল পোদ্দার, গাওহার সিরাজ জামিল, মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, আখতার হোসেন অপূর্ব ও মোহাম্মদ রাশেদ।
মোহাম্মদ হাতেম দীর্ঘদিন ধরে বিকেএমইএর সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালে তিনি নির্বাহী সভাপতি হন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মোহম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পর্ষদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলে ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন পর্ষদ গঠন করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিকেএমইএর নতুন পর্ষদ কাজ করবে। প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে কীভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আরও বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা আমরা করব। একই সঙ্গে বর্তমানে উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যায় রয়েছেন যেমন—ঋণপত্র খোলা ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া নিয়ে হয়রানি, সেগুলো নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ করব।’
২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিকেএমইএর সভাপতির পদে ছিলেন সেলিম ওসমান। সর্বশেষ ২০১২ সালে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি হন তিনি। তারপর ২০১৪, ২০১৬, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ করে সভাপতি হন সেলিম ওসমান। কিছুদিন আগে বিলুপ্ত জাতীয় সংসদে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সদস্য ছিলেন। তাঁর ভাই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। বিকেএমইএতে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের কারণে টানা পাঁচবার সমঝোতার মাধ্যমে পর্ষদ গঠন করা হলেও সংগঠনের উদ্যোক্তারা চুপচাপ ছিলেন।
এদিকে গতকাল শনিবার বিজিএমইএর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এস এম মান্নান। তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনিও শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন। সংগঠনটির নতুন সভাপতি হয়েছেন ডিজাইনটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। এত দিন দিন তিনি জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।