এ শিল্পপার্কে মোট ৪২টি প্লট রয়েছে, যা ২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কারখানা স্থাপন করেছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধশিল্প পার্কের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো সেখানে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হয়নি। আবার শিল্পপার্কের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপির নির্মাণকাজও শেষ হয়নি। এ ছাড়া বিনিয়োগের অর্থসংকট ও প্রশাসনিক জটিলতা তো রয়েছেই। এসব কারণে ওষুধশিল্প পার্কে নতুন কারখানা স্থাপনে উদ্যোগী হচ্ছেন না এ খাতের শিল্পমালিকেরা। যাঁরা কারখানা করেছেন, তাঁরাও উৎপাদনে যেতে পারছেন না।
তবে ওষুধশিল্প পার্কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জানিয়েছে, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে এ শিল্পপার্কে গ্যাস–সংযোগ পৌঁছে যাবে। এরপর দ্রুত কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন শুরুর জন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে তারা।
২০০৮ সালে শুরু হয় এ শিল্পপার্কের কাজ। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে এখনো গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হয়নি।
দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে সরকার অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) বা ওষুধশিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিসিককে। ২০০৮ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে চার দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালে এটির উদ্বোধন করা হয়। শুরু থেকে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় লেগেছে ১৩ বছর। এরপর কেটে গেল আরও তিন বছর, গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির সময় পার হয়েছে ১৬ বছর। যদিও প্রকল্পের শুরুতে বলা হয়েছিল, দুই বছরে এটির কাজ শেষ হবে। অথচ ১৬ বছরেও কোনো কারখানা এখনো উৎপাদন শুরু করতে পারেনি এ শিল্পপার্কে।
যাচ্ছে না গ্যাস-সংযোগ
এপিআই শিল্পপার্কে গ্যাস–সংযোগের কাজ করছে তিতাস গ্যাস। বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে তিতাস। এই পাইপলাইন দিয়েই ওষুধশিল্প পার্কে গ্যাস সরবরাহের কথা। কিন্তু লাইনের ত্রুটির কারণে এখন তা পুনঃস্থাপনের কাজ করছে তিতাস। এ কারণে এখনো গ্যাস-সংযোগ মিলছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মকর্তা জানান, আট কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ ইতিমধ্যে শেষ। বাকি অংশে বাসাবাড়ি ও জলাশয়ের মতো কিছু জায়গা রয়েছে। এ কারণে কিছুটা বাড়তি সময় লাগছে। মার্চের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হবে।
কারখানা স্থাপনে সাড়া কম
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, শিল্পপার্কে মোট ৪২টি প্লট রয়েছে, যা ২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারখানা স্থাপন করেছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে এক্মি ল্যাবরেটরিজ, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইউনিমেইড-ইউনিহেলথ ফাইন কেমিক্যালস। কারখানা করলেও এসব কোম্পানি এখনো উৎপাদনে যেতে পারছে না গ্যাস–সংযোগ না থাকায়। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কারখানা তৈরির কাজই শুরু করেনি।
এ বিষয়ে বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, যাঁরা এখনো কারখানার কাজ শুরু করেননি, তাঁদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসব আমরা। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে সেখানে গ্যাস চলে যাবে। ফলে আর গ্যাস–সংযোগ না পাওয়ার কারণ দেখানোর সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম শফিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পপার্কে গ্যাস-সংযোগের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় বেশির ভাগ উদ্যোক্তা কারখানা স্থাপন করেননি। আর ওষুধ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছেন। এ কারণে কারখানা স্থাপনে গতি কম।
ওএসএস চায় প্রতিষ্ঠানগুলো
ওষুধশিল্পের মালিকেরা বলছেন, এ খাতের কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা আলাদা অনুমতি নিতে হয়। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে তাঁরা আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় পড়ছেন।
ওষুধশিল্প পার্কে প্রায় ৯ একর জায়গার ওপর কারখানা করেছে এক্মি ল্যাবরেটরিজ। গ্যাস–সংযোগ পেলে জুলাইয়ে উৎপাদনে যেতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। এক্মি ল্যাবরেটরিজের পরিচালক শেখ মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা সব ধরনের নিয়ম মেনে কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে চাই। তবে কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য এক দরজায় সেবা (ওএসএস) চালু করা দরকার।